বাংলাদেশের মৎস শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত !
সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা : বাংলাদেশের মৎস শিল্প ধ্বংস করার চক্রান্ত !!
সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের নামে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাণিজ্যিক ট্রলারের মাধ্যমে সব ধরণের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কেউ এ আদেশ ভেঙ্গে মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (http://goo.gl/CV8tgA)
এখানে কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন-
১) বাংলাদেশের মাছের ট্রলারগ্রুলো প্রতিদিন সমুদ্র থেকে কত পরিমাণ মাছ ধরে তার কোন হিসেব নেই। এক চট্টগ্রামের ফিশারীঘাট মাছের আড়ৎ-এ দৈনিক হাজার হাজার টন মাছ কেনা-বেচা হয়। তাহলে অসংখ্য মাছের আড়তে ঠিক লক্ষ টন মাছ কেনাবেচা হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। উল্লেখ্য হাটে বিক্রি ছাড়াও অনেক মাছ এদিকে-ওদিক চলে যায়, সেটারও কোন হিসেব নেই। সে হিসেবে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখলে ঠিক কত লক্ষ টন মাছ ধরা হলো না, কত মাছ থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হলো তার হিসেব কে রাখবে ?
২) মে-জুলাই মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখা হবে, অথচ এর পরের দুই মাস সমুদ্র অত্যধিক উত্তাল থাকায় মাছ ধরা কঠিন। এ অবস্থায় পুরো ৪ মাস মাছশূণ্য থাকতে হবে জেলেদের। উল্লেখ্য সাগরে মাছ ধরতে প্রায় ২৬ হাজার ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ২৪ হাজার ইঞ্জিনবিহীন নৌকা ও ১৮৪টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার রয়েছে। এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক কোটি লোক, যারা এ সময় বেকার বসে থাকবে এবং দেশ অনেক মৎস সম্পদ হারাবে। ফলে দেশীয় চাহিদা হ্রাস পাবে এবং বিদেশী মৎস আমদানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩) এর আগেও দেখা গেছে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সমুদ্রে সরকার মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে, কিন্তু সে সময় শত শত ভারতীয় নৌকা ঠিকই বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে বিনা বাধায় মাছ শিকার করে নিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধের কারণ- বাংলাদেশের জেলেদের সরিয়ে দিয়ে ভারতীয় জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করতে পারে- সেই ব্যবস্থা করা।
খবরগুলো দেখতে পারেন-
ক) ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা: কৌশলে মাছ শিকার করছে ভারত-মিয়ানমারের জেলেরা (http://goo.gl/8my4zQ)
খ) বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরছে ভারতীয়রা (http://goo.gl/NxIiws)
গ) মাছ চুরি করতে এসে ধরা খেল ভারতের ৬১ জেলে (http://goo.gl/OlfpPC)
ঘ) বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ পানিসীমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতীয় জেলেরা
(http://goo.gl/V5L578)
৪) বাংলাদেশ বিদেশে মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। একইসাথে দেশী বাজারের বিরাট চাহিদা পূরণ করে সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু এত লম্বা সময় মাছ শিকার বন্ধ রেখে একদিকে যেমন রফতানি বাজার হারাবে বাংলাদেশ, অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হবে ভারতীয় নিম্নমানের মাছে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে বাংলাদেশের মৎস রফতানির বাজার দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে ভারতীরা (http://goo.gl/keJMFr), আবার বাংলাদেশের মার্কেটেও প্রবেশ করছে ভারতীয় নিম্নমানের মাছ। (http://goo.gl/US7DT8)
এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, সরকারের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশী জেলে ও মৎসজীবিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন- এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ মৎস শিল্পকে (দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি শিল্প) ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। আমার মনে হয়, ভারতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মৎসশিল্পকে ধ্বংস করার এ গভীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের প্রতিবাদ করা উচিত।
No comments