“আমরা কৃষি থেকে শিল্পের দিকে বাংলাদেশের যাত্রা
সম্প্রতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে গিয়ে বলেছেন-
“আমরা কৃষি থেকে শিল্পের দিকে যাচ্ছি ”।
(http://bangla.bdnews24.com/economy/article1163053.bdnews)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে শিল্পকারখানা বিস্তার চান, এটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নাই। কিন্তু দ্বিমত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ঐ সফরের পর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “কৃষকদেরও ট্যাক্স দিতে হবে”, কিংবা বলেছেন- “ইক্ষু শুড বি গেট আউট”। একই সাথে বাজেটে আমরা দেখেছি- কৃষিতে ধারাবাহিকভাবে বরাদ্দ কমছে, এবং ভর্তুকীও বৃদ্ধি পায়নি।
তারমানে স্বাভাবিকভাবে আমরা এটা অনুমান করে নিতে পারি, বর্তমান আওয়ামী সরকারের নীতিনির্ধারকরা এটা ডিসিশন নিয়েছেন- বাংলাদেশে কৃষি সেক্টরকে ধিরে ধিরে নিরুৎসাহিত করা হবে। এবং সেই কার্যক্রমও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এ নীতির সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করি। কারণ আমি মনে করি, দেশে শিল্প সেক্টরে উন্নতির দরকার আছে, কিন্তু তাই বলে কৃষিকে নিরুৎসাহিত করে নয়। শিল্প সেক্টরে যখন উন্নয়ন সাধিত হতে থাকবে, তখন যদি কৃষিতে জড়িতরা লাভের কথা ভেবে শিল্পতে যোগ দেয়, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তবে আগেই কৃষিকে নিরুৎসাহিত করতে গেলে দেশে অর্থনীতির বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
কারণ বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকার ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। এই বিরাট জনগোষ্ঠীকে যখন ট্র্যান্সফার করা হবে তার জন্য কত বড় আয়োজন দরকার ? কত শিল্পের উন্নতি দরকার ? কিন্তু সেটা হওয়ার আগেই যদি কৃষিকে নিরুৎসাহিত করা শুরু করা হয়, সেটা কতটা বাস্তব সম্মত?
বিশেষ করে আমরা জানি, বাংলাদেশের শিল্পখাতের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। গার্মেন্টস খাতের অবস্থা খুবই করুন, অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হযে গেছে, অনেক গার্মেন্টসকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়েছে। বড় বড় কলকারখানা গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে, অসংখ্য নতুন কারখানা চালু হতে পারছে না্। রিয়েল স্টেট ব্যবসার অবস্থাও যাচ্ছে তাই। বাংলাদেশের শিল্পের দিকে যাওয়ার লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না, অথচ এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কৃষিতে বাধা !
আমি জানি না ভবিষ্যত বিশ্ব কোন দিকে যাচ্ছে, শুধু এতটুকু বলতে পারি বর্তমানে শিল্পনির্ভর দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি এখন নিম্নমূখী। চীন-জাপানের উৎপাদন খাত দ্রুত নেমে যাচ্ছে। আগেই গবেষকরা ঘোষণা দিয়েছিলো পৃথিবীতে খাদ্যের অভাবে দাঙ্গা লাগতে পারে, বর্তমানে ভেনেজুলোতে খাদ্য দাঙ্গা শুরুও হয়ে গেছে। বিশ্বমোড়লরা নিজেদের অস্ত্র ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে দেশে দেশে নিজেরাই যুদ্ধ বাধাচ্ছে, আবার নিজেরাই অস্ত্র বিক্রি করছে।
আমার মনে হয়, কলকারখানার লোহা লক্করের দাম থাকতে পারে, কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে সব বৃথা। তাই আগে খাদ্য চাই। কুড়ে ঘরে যদি খাদ্য থাকে তবে সবাই খুশি, কিন্তু বিরাট অট্টলিকায় যদি সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকে, কিন্তু খাদ্য না থাকে তবে কিন্তু সব বৃথা।
তাই মাননীয় প্রধামন্ত্রী, বাংলাদেশে শিল্প সেক্টরে উন্নতি করুণ, সেটা সমস্যা নয়। কিন্তু সেটা যেন কৃষিখাতকে জোর করে বন্ধ করে না দিয়ে হয়। আগে শিল্পে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হোক, তখন না হয় চিন্তা করা যাবে।
No comments