ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষ শাসন করার পদ্ধতি
প্রাথমিক অবস্থায় যুদ্ধ জয় করলেও তারা কিন্তু ক্ষমতা হাতে নিতে পারেনি। কারণ এত বড় এলাকা শাসন করার মত লোকবল তাদের ছিলো না। এজন্য প্রথমে ব্রিটিশরা তাদের একটি অনুগত্য শ্রেণী তৈরী করেছিলো। বলাবাহুল্য সেই অনুগত্য শ্রেণীটা ছিলো হিন্দুদের মধ্যে। এরপর সেই হিন্দুদের শুধু ক্ষমতার উপর পদগুলোতে বসানো হয় এবং এই উপায়েই তারা পুরো ভারতবর্ষকে শাসন করে যায়।
বর্তমানে আওয়ামী সরকার আসার পর সকল উর্ধ্বতন পদে হিন্দুদের বসানো হয়েছে। বিষয়টা অনেকটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শুরুর মত। এভাবে করে আওয়ামী পোষকের উপর ভর করে যখন উপরের ক্ষমতাগুলো হিন্দুদের দখলে চলে যাবে, হয়ত তখন হঠাৎ করেই আওয়ামীলীগের পতন ঘটানো হবে। আর তখন বাংলাদেশের ক্ষমতা সহজেই বুঝে নেবে বিদেশী কোন শক্তি।
আপনি হয়ত ভাবতে পারেন, তখন কি মুসলমানরা বসে থাকবে ?
আমি বলবো, হ্যা- মুসলমানরা তখন বসেই থাকবে। উপরের পদগুলো যখন হিন্দুদের হাতে তখন নিচের মুসলমানরা বসেই থাকবে। হিন্দুদেরই আনুগত্য করে যাবে। ব্রিটিশ আমলে এমনটাই হয়েছিলো। মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলো, মুসলমানরা তথন অনেক ধার্মীক ছিলো, কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। তাদের হাত পা ছিলো বাধা। কারণ উপরের পদে বসে ছিলো ব্রিটিশ অনুগত হিন্দুরা।
আজকাল হিন্দুদের ক্ষমতা পাওয়া দেখে মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই বলে- “থাক না, একটু দিলে কি হয়, এত সাম্প্রদায়িকতা করেন কেন ?
যারা এ ধরনের কথা বলেন, দয়া করে সঠিক ইতিহাস পড়ে নিবেন। যে জাতি তার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, সে জাতিকে পস্তাতে হয়। আপনাদের ইতিহাস বলছে, এই হিন্দুদের ঘাড়ে করেই বিদেশী শক্তি এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছিলো। মুসলমানদের অতিরিক্ত হিন্দু তোষনই তাদের কাল হয়েছিলো, মুসলমানরা আকাশ থেকে নেমে গিযেছিলো মাটিতে। যে হিন্দুরা ছিলো মুসলমানদের ভৃত্য, সে হিন্দুরা হঠাৎ করে হয়ে গেলো বাবু, মুসলমানরা হয়ে গেলো তাদের ভৃত্য। সে এক করুণ ইতিহাস।
এ সম্পর্কে ১৮৯৭ সালে মীর মশাররফ হোসেন ‘বাংলার মুসলমান সমাজের একখানি চিত্র’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন । কবিতায় তিনি বলেছিলেন-
এক সময়কার সম্পদশালী মুসলমানরা তাদের পাকা বাড়ি ছেড়ে কুঁড়েঘরে বাস করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি কবিতার ছন্দে আরো বলেছিলেন- হিন্দু নায়েবের কারণে মুসলমান সম্ভ্রান্ত পরিবার তার জমিদারী হারিয়েছে এবং যেই হাট একদিন তাদেরই ছিল, সেখানে কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রি করতে। কবিতার মধ্যে মীর মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন কি কারণে মুসলমানদের এই করুণ দশা হলো। বলেছিলেন- হিন্দুরা খুব তোষমোদি করতো, মুসলমানদের সামনে এসে হাত জোর করে কথা বলতো। আর মুসলমানরাও হিন্দুদের এই তোষামোদি খুব পছন্দ করতো। মুসলমানদের গাফেলতি ও হিন্দু তোষণের কারণেই মুসলমানদের এই করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিলো। (পুরো কবিতার পিডিএফ- https://goo.gl/RHQLYm)
এ ইতিহাস বাংলাদেশের মুসলমানদের জানা খুবই দরকার এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়াও দরকার। নয়ত খুব শিঘ্রই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
No comments