‘দানবীর’ নাকি ‘দানব’ রাগীব আলী ??
সিলেটের জিন্দাবাজার থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার হেডলাইন এমনই। রাগীব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করেছেন। এ কারণে তাকে দানব বলে অ্যাখ্যায়িত করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
আচ্ছা,
নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে রাগীব আলী কেমন মানুষ ?
স্থানীয় লোকজন রাগীব আলী সম্পর্কে কি বলেন ??
আপনি একজন নিরপেক্ষ সিলেটি মানুষের সাথে বলে দেখুন।
দেখবেন সে নিদ্বির্ধায় বলবে-
রাগীব আলী একজন প্রকৃত দানশীল লোক।
তিনি একাধিক অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন যেখানে খুব কমমূল্যে গরীব জনগণ সেবা নিতে পারেন।
রাগীব আলী অনেক গরীব মানুষকে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেন। তাদের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতেন, যাদের বাড়ি নেই তাদের বাড়ি বানিয়ে দেন ।
রাগীব আলী অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন, যেখানে মানুষ উন্নত যোগাযোগের সুবিধা পেতো।
রাগীব আলী বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা, মসজিদ এমনকি মন্দিরগুলোকে পর্যন্ত আর্থিক অনুদান দিতেন। যে কোন অনুষ্ঠানে অনুদান চাইতে আসলে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দিতেন তিনি।
জনগণের এত উপকার করার পরও এখন রাগীব আলীকে দানব বলে অ্যাখ্যায়িত করা হচ্ছে, ওয়ারেন্ট জারি করে দেশ ছাড়া করা হয়েছে (সম্প্রতি ওয়ারেন্ট জারির পরে সে স্বপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন)। কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে হিন্দুর জমি নিয়েছে। আর যে ব্যক্তি হিন্দুর বিরোধীতা করে দুনিয়াতে সেই হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ মানুষ।
তারাপুরের জনগণ অবশ্য জানিয়েছে, হিন্দু পুরোহিত এমনি এমনি রাগীব আলীকে জমি দেয়নি। টাকার বিনিময়েই রাগীব আলীকে জমি দিয়েছিলো। যদিও এখন সেই টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে। ইতিহাস বলে হিন্দুদের এটা একটা পুরাতন স্বভাব হচ্ছে বেঈমানী করা। হিন্দুরা দেশভাগের সময়, ৬৫ যুদ্ধের সময় কিংবা ৭১ যুদ্ধের সময় এক জমি ৫ জনের কাছে বিক্রি করে ভারত পালিয়ে যেতো, আর বলতো- “আপনাকে কমমূল্যে দিলাম, কাউকে বলবেন না কিন্তু।” কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার পর বের হতো আর্থিক লাভবান হতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির জন্য ১ জমি সে ৫ জনের কাছে বিক্রি করেছে সেই হিন্দু।
রাগীব আলীর দোষ সে হিন্দুর জমি দখল করেছে,
তাই এত ভালো কাজ করার পরও সে দানব হয়েছে।
আচ্ছা হিন্দুর জমি যখন সে রেজিস্ট্রি করলো, তখন তো সরকারী লোকজনও এর সাথে জড়িত ছিলো, তাদের কথা কেন আসছে না ? রাগীব আলী যদি দায়ী হয়, তবে সেই দুর্নীতির সাথে তো সরকারও জড়িত। সরকারের কাজ থেকেই তো লিজ নেওয়ার কাজ করা হয়েছে। তখন তারা ধরলো না কেন ? তারমানে সরকারও কম দুর্নীতিবাজ নয়।
আচ্ছা রাগীব আলীর দুর্নীতির কারণে যদি তাকে দেশছাড়া হতে হয়
তবে বাংলাদেশের দুর্নীতির কি অভাব পড়েছে।
খোদ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারিরা কতটুকু ভালো মানুষ ??
খোদ মেয়র নাসির পর্যন্ত বলেছেন- বরাদ্দ চাইতে গেলে মন্ত্রনালয়কে নাকি ৫% কমিশন দিতে হয়। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত গাড়ি ভর্তি টাকাসহ ধরা পড়লেও তাকে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হলো, তাকে কিন্ত দেশ ছাড়া করা হয়নি।
আচ্ছা, মন্দিরের জায়গা যদি নিয়েও থাকেন রাগীব আলী, তবে কি তিনি খারাপ কিছু করেছেন ??
ঐ মন্দিরটা কয়জনের উপকার করতো ?
অথচ সেখানে যে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ নির্মাণ করেছেন তিনি সেখান থেকে তো অগণিত লোক সুবিধা পেতো। অথচ মন্দিরের এত বড় জায়গা কি উপকার দিতে পারতো মানুষকে ?
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কিন্তু রাগীব আলী রবিনহুডের অবস্থানে ছিলো।
আসলে রাগীব আলীর মূল দোষ- সে হিন্দুর জমি নিয়েছে।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে- সেলিম ওসমানের কথা। সে এক হিন্দু শিক্ষককে কানে ধরে ওঠবস করিয়েছিলো দেখে তাকে কেমন নাজেহালটাই না করা হলো। ঐ সময়কার কথা মনে পরে, সেলিম ওসমানকে পুরো একঘরে করা হয়। ফ্রড শ্যামল কান্তি ভদ্রকে মুহুর্তে হিরো বানিয়ে, মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমানকে রাজাকার বানিয়ে ফেলা হয়। মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে তাকে দেশ ছাড়া করার উপক্রম করা হয়েছিলো। অথচ নারায়নগঞ্জের মানুষ সেলিম ওসমান বলতে পাগল, মানুষের অনেক উপকার করেন সেলিম ওসমান। কিন্তু এক হিন্দুর বিরোধীতা করায় তাকে এমন কুথ্যাত করে উপস্থাপন করা হলো, যেন মনে হয়- দুনিয়াতে সেলিম ওসমানের মত এত খারাপ মানুষ দুইটা নেই। বলাবাহুল্য সেলিম ওসমান বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ ছিলো বলে বেঁচে গিয়েছেন, নয়ত এক শিক্ষককে কানে ধরে ওঠবস করানোয় তাকেও রাগীব আলীর মত দেশছাড়া হতে হতো।
তারমানে দেখা যাচ্ছে- একজন মানুষ যতই ভালো কাজ করুক, যতই মানুষের উপকার করুক, সে যদি শুধু হিন্দুর বিরুদ্ধে কোন অবস্থান নেয়, তবে পৃথিবীতে তার মত খারাপ লোক আর দুইটা নেই। তাকে ‘দানব’. ‘জঙ্গি’, ‘খাঃপোঃ’ ইত্যাদি বলে অ্যাখ্যায়িত করা হবে, নাজেহাল করা হবে।
আচ্ছা রাগীব আলী দেশছাড়া হওয়ায়- কে উপকৃত হলো ?
হিন্দুদের মনের ক্ষোভ মিটলো, কিন্তু সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
যে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাগীব আলীর দ্বারা উপকৃত হতো
তারা আর উপকৃত হতে পারবেন না।
লক্ষ মানুষের ক্ষতি করা হলো, কিন্তু হিন্দুদের তো মুসলিম বিদ্বেষ মিটলো।
তাহলেই হবে।
তবে দুঃখের বিষয়-
হিন্দুদের সেই সাম্প্রদায়িকতা মনোভাব বুঝতে এখনও মুসলমানরা ব্যর্থ । গুজরাটে ২০০০ মুসলমানকে জবাই করলেও হিন্দুদের কাছে নরেন্দ্র মোদি পায় বীরের সম্মান-নিরঙ্কুশ ভোট। আর মুসলমানদের কেউ এক হিন্দুর জমি দখল করলে তাকে মুসলমানরাই ডাকে ‘দানব’, খাঃপোঃ অপমান করে, মামলা দিয়ে তাকে দেশ ছাড়া করে।
বাংলাদেশের মুসলমানরা এখনও বুঝতেছে না -
হিন্দুরা তাদের অনেকটাই কোনঠাসা করে ফেলেছে।
মুসলমানরা সম্প্রদায়িক উদারতা দেখাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু হিন্দুরা ঠিকই সাম্প্রদায়িক টার্গেট নিয়েই এগোচ্ছে।
মুসলমানদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয়, প্রভাবশালী তাদেরকে একঘরে করে ফেলছে, দেশছাড়া করছে। আলটিমেটলি বাংলাদেশের পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে হিন্দুর পায়ের নিচে ফেলা হচ্ছে, পরাধীনতার শিকল পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হিন্দু তোষক মুসলমানরা সেটা বুঝতেছে না। হয়ত একদিন বুঝবে, কিন্তু তখন রাগীব আলীর মত তাকেও দেশ ছাড়া হতে হবে, এটা আপনারা মনে রাখবেন।
No comments