মোদি কেন নওয়াজ শরীফের মায়ের ‘পা ছুয়ে’ সালাম করলো ?
সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতিরিক্ত হ্যাংলামি ছিলো চোখে পড়ার মত (http://goo.gl/zxuZPO)। অনেক সংবাদ মাধ্যমেই খবর এসেছে মোদি নওয়াজ শরীফের মায়ের পা ছুয়ে সালাম করেছে। বিষয়টি যে শুধু পা’ ছোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ তাই নয়, বরং মোদি যে নওয়াজের মায়ের পা’কে অজুহাত করে বিশেষ কোন সুবিধা নিতে চাইছে সেই আভাসই প্রদান করেছে এ সংবাদটি। বলাবাহুল্য মোদি ক্ষমতায় আসার পর উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন এবং বর্তমান ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের মনভাবের সঙ্গে মোদির বর্তমান পাকিস্তান সফরের কর্মকাণ্ড কিছুই মিল খায় না। সম্পূর্ণ বিষয়টি যেন উল্টো্, অন্তত মোদির এ সফর উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের মুখে চুন-কালি মেখে দিয়েছে, কারণ ছোট ভাই বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ক্ষমা চায়, মোদি যেন পাকিস্তানে গিয়ে ঠিক সেই কাজটি করেছে।
পাকিস্তান ও ভারতের বর্তমান চলমান অবস্থা কেমন ছিলো ?
পাকিস্তান ও ভারতের বর্তমান চলমান পরিস্থিতি ছিলো সত্যিই যুদ্ধংদেহী। বিশেষ করে ভারতীয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ পাকিস্তানকে আরো বেশি এ্যাগ্রেসিভ হতে উৎসাহিত করেছিলো। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ভারতের অতিরিক্ত লম্ফ-ঝম্ফ দেখে গত জুন মাসে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন-
“আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে চাই না। কিন্তু যদি আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে, তাহলে এই পরমাণু অস্ত্রগুলিকে রেখে দিয়ে কী করব? আমরা কী এগুলো শবে-বরাতে ফুটানোর জন্য রেখেছি? আমাদের আক্রমণ করার কথা ভাববেন না। আমাদের সীমান্ত স্থায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন না। আমরা ক্ষুদ্র শক্তি নই। এখন আমরা অন্যতম প্রধান পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র।” (http://goo.gl/en5FJ1)
উল্লেখ্য, মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের ধারণা ছিলো তারা হয়ত এক চেটিয়া পাকিস্তানের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে ওবামার ভারত সফরের পর অনেকেই ভেবেছিলো এবার হয়ত আমেরিকা-ভারত এক সাথে পাকিস্তানের উপর চড়াও হবে। সত্যিই বলতে, আমেরিকার একটি বড় সফলতা এবং ভারতের একটি বড় সৌভাগ্য এই যে- তারা পাশাপাশি দুটো মুসলিম দেশকে প্রায় দেড় দশক ধরে লাগিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ আফগান সীমান্তেই ব্যস্ত রয়েছে পাকিস্তানের প্রায় ৩০% সেনা। এবং আমেরিকা বার বার পাকিস্তানকে বোঝাতে চেয়েছে- “তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু ভারত নয়, বরং অস্থিতিশীল আফগানিস্তান, তাই দৃষ্টি সেই দিকেই আবদ্ধ রাখো।” কিন্তু যতই ঐ দিকে ঘোরানো হোক দৃষ্টি, পাকিস্তানের শতকরা ৭০% সেনার দৃষ্টি এখনও আবদ্ধ রয়েছে ভারতের দিকে, এছাড়া পাকিস্তানের রয়েছে দৃঢ় ভারত বিরোধী মনোভাব এবং পাকিস্তান এও জানে, কথিত সন্ত্রাসাবাদী কার্যক্রম দিয়ে পাকিস্তানকে ব্যস্ত রাখার পেছনে অন্যতম দায়ি হচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’।
পাকিস্তান যে ভারতের উপর ক্ষেপে রয়েছে এবং যে কোন মুহুর্তে ভারতের সাথে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যেতে পারে এমন পূর্বাভাস বেশ কিছুদিন ধরেই দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই না, ভারতের উচিত নিজে গিয়ে সমঝোতা করা এমনও মেসেজও তারা নিক্ষেপ করছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ সম্পর্কে এ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্ল্যাংকেন বলেছিলো- “পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। আর সেটা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর। ভারত ও পাকিস্তান তাদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে, টেনশন কমিয়ে আনতে পারে এবং অনেক ভালো সমঝোতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া।’ (http://goo.gl/NdtqIm)
অথচ হাভাতে ভারতকে উত্তেজিত করেছিলো কিন্তু এই আমেরিকাই। উদাহরণস্বরূপ গত জুন মাসে আমেরিকার সাম্প্রতিক বিতর্কিত ইসলাম বিদ্বেষী রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপার্থী ডোনাল্ড ট্র্যাম্প বলেছিলো- “পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে মার্কিন প্রশাসনের উচিত হবে ভারতের সহায়তা গ্রহণ করা। যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে পারে ভারত। (http://goo.gl/U2Rr9M) অর্থাৎ নিজের শক্তিতে নয়, এতদিন ইহুদীবাদী যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিতে পাকিস্তানের সাথে লাগতে গিয়েছিলো ভারত, সেই আমেরিকার যথন তাকে ব্যাকঅ্যাপ দিলো না তখন বাধ্য হয়ে লজ্জায় মাথা নোয়ালো ভারত।
আসলে উগ্রবাদীরা যে যাই মনে করুক, বর্তমান ভারত যে কত কঠিন পরিস্থিতিতে আছে তার মোদি সরকার ও মার্কিনীরা খুব ভালো করেই জানে। সম্প্রতি খবর এসেছে, ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা খাদ্য হিসেবে ঘাস খাচ্ছে (http://goo.gl/i81eQw)। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছে। মোদি যে ‘আচ্ছে দিন আতে হে’ টার্গেট নিয়ে এসেছিলো তার পুরোটাই এখন দিবাস্বপ্ন। যুদ্ধ করার কোন বাস্তব শক্তিই মোদি সরকারের নেই । তারাই বলছে, যুদ্ধ লাগলে ১৫ দিনের মত গোলাবারুদও ভারতের মজুদ নেই (http://goo.gl/ZNGg3b)।
শুধু তাই নয় পাকিস্তানের বর্তমান পরমাণু অস্ত্রের পরিমাণও ভারতের থেকে বেশি (http://goo.gl/k7BqWt)। এছাড়া পাকিস্তানের কাদির খানের নিজস্ব পরমাণু প্রযুক্তি, ‘ফার্স্ট এ্যাটাক’ আক্রমণ নীতি এবং শক্তিশালী ইউরেনিয়াম নির্ভর পরমাণু বোমার কাছে অনেকটাই অসহায় ভারতের প্লুটোনিয়াম নির্ভর কথিত পরমাণু অস্ত্র।
সত্যিই বলতে, ভারতের ‘পা ছুয়া’ নীতি এই বারই প্রথম নয়, এর আগেও তারা দেখিয়েছে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান যখন আক্রমনকারী ভারতকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাজেহাল করেছিলো তখন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী রাশিয়ার সমঝোতায় পাকিস্তানের পা ছুয়েছিলো। একইভাবে কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তান যখন ভারতকে নাজেহাল করেছিলো ঠিক তখনই আমেরিকাকে মাধ্যম মেনে নওয়াজকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য করেছিলো ভারত। প্রতিবারেই ভারত দেখিয়েছিলো পেছনের খেল, সম্মুখ যুদ্ধের শক্তি কখনই তার ছিলো না। কিছুদিন আগে যখন পাকিস্তান করাচিতে এক জোড়া পরমাণু চুল্লী থাকার পর নতুন করে আরেক জোড়া পরমাণু চুল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলো, তখনই যেন নিজের নিরাপত্তার চিন্তায় মাথা খারাপ হলো ভারতের (http://goo.gl/TxbV0b) ।
তাই এবারও পাকিস্তানের ‘ফার্স্ট এ্যাটাক পলিসি’র বিপরীতে ‘পা ছুয়া’ পলিসি দেখালো ভারত। কারণ যদি কখনও যুদ্ধ লেগেই যায়, তবে যেন নওয়াজের মা তার হয়ে সুপারিশ করে-“বাবা দয়া করে ভারতের উপর পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করিস নে”। মুসলমানদের জন্য দুর্ভাগ্য, বর্তমান পাকিস্তানের ক্ষমতায় শক্তিশালী কোন নেতা নেই, নয়ত দুর্বল ভারতকে এতদিনের হিসেব-নিকেষ কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিলো।
আজ আর নয়। সবাইকে ধন্যবাদ।
No comments