Header Ads

ad728
  • Breaking News

    বাংলাদেশ ও ভারতীয় সিনেমার মিক্সিং (এডাল্ট পোস্ট)

    কয়েকদিন আগে কলকাতার সিনেমার নায়িকা ঋতুপর্ণা ঘোষের একটা সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। সাক্ষাৎকারের এক অংশে কলকাতার মিডিয়া ‘এইসময় নিউজ’র সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করে-
    “আচ্ছা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লিখে সার্চ দিলে কেন ‘ঋতুপর্না সেনগুপ্ত হট সিনস’ আগে আসে। আপনি নাকি আপনার ছেলেকে বলেছেন ওগুলো না দেখতে।”
    ঋতুপর্না : “আমি বলেছি, হট সিন দেখো, তবে মা সেই হট সিনে থাকলে দেখো না”।
    eisamay.indiatimes.com’ প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারটি ছিলো বেশ বড়। অনেক বিষয়ই সেখানে আলোচনা হয়েছে। উপরের কথাটি ছিলো মাঝের অংশে খুব ছোট এবং প্রসঙ্গহীন একটি বিষয়। কিন্তু অবাক করার মত বিষয়, সাংবাদিক ঐ পুরো প্রতিবেদনটির হেডিং করলেন- “হট সিন দেখো, তবে মা সেই হট সিনে থাকলে দেখো না”।
    আমি এই সময়ে’র হেডিং এবং সাক্ষাৎকারটি বিষয় নিয়ে অনেকক্ষন চিন্তা করলাম, ভাবলাম-আচ্ছা, সাংবাদিক কেন এত বিষয় থাকতে মা-ছেলের বিষয়টি নিয়ে আসলো কেন ? আবার সেটিকে কেন পুরো প্রতিবেদনের মুখ্য হেডিং করা হলো ??
    আমার চিন্তার সমাধান কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেলাম। সেটা হলো মানুষকে একটু নিষিদ্ধ যৌনতার (মা-ছেলে) কথা স্মরণ করিয়ে আনন্দ দেওয়া, চুলকানি সৃষ্টি করা, এই ধরনের হেডিং এর উদ্দেশ্য। সত্যি বলতে মা-ছেলের মধ্যে যৌন চিন্তা আসতে পারে, এটা বাংলাদেশে চিন্তা করা অসম্ভব হলেও ভারতে অসম্ভব নয়, বরং এ ধরনের অজাচারের চাহিদাও আছে। ভারতে এ ধরনের অজাচারের কথা কাহিনী নিয়ে প্রায়শঃ দর্শকদের যৌন আনন্দ দেওয়া হয়। এ কারণে একটি নিউজের মধ্যে এ ধরনের চুলকানি দেওয়ার সুযোগ খুঁজে সংবাদিকরা।
    যারা ভারতীয় ফিল্ম সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা আমার কথা একেবারে ফেলে দিতে পারবেন না। ভারতে ফিল্ম বা মধ্য রাতের সিরিয়ালগুলো যে ধরনের সম্পর্ক দেখানো হয়, তা বাংলাদেশে একেবারে বিরল। ঘরের কাজের ছেলের সাথে গৃহকত্রীর অবৈধ সম্পর্ক, দেবর-ভাবীর অবৈধ সম্পর্ক, পাশের বাড়ির কিশোর ছেলের সাথে মধ্য বয়সী মহিলার অবৈধ সম্পর্ক, বহুগামী মহিলার কাহিনী এগুলো ভারতে খুব কমন বিষয়, এসব কাহিনী পারিবারিকভাবেই ভারতীয়রা উপভোগ করে, আনন্দ লাভ পায়।
    সে যাই হোক, আমি বলতে চাচ্ছি ভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশে নাটক-সিনেমাগুলোতে এখনও এ ধরনের চুলকানি টাইপ সম্পর্ক পুরোপুরি এসে পৌছায়নি। স্বাভাবিকভাবে সিনেমা-নাটকে যখন আসবে, তখন সেটা সমাজেও বিস্তৃতি দ্রুত বিস্তার লাভ করবে এতে সন্দেহ নাই।
    আপনারা হিল্লোল-নওশীন নামে বাংলাদেশের এক জুটিকে চিনেন নিশ্চয়ই । এ জুটির প্রথম সিনেমার নাম ছিলো ‘হ্যালো অমিত’। সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলো ভারতীয় পরিচালক শঙ্খ দাস গুপ্ত। আমার মনে হয়েছে, প্রথম জীবনে নওশিন-হিল্লোল ঐ শঙ্খদাস গুপ্তের সংষ্পর্ষে খুব সহজেই শিখে গিয়েছিলো কি করে মানুষকে চুলকানি দিতে হয়। আপনারা হয়ত জানেন, এই হিল্লোল-নওশিন একটা ভিডিওসাইট তৈরী করেছে, যার নাম ‘থার্ডবেল ডট কম’। এই থার্ডবেল ঈদ উপলক্ষে কয়েকদিন আগে একটা নাটক নির্মাণ করে, নাটকের নাম ‘বয়ঃসন্ধি’। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাতেও এই নাটকের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিউজ ছাপে। নাটকের ঘটনাটা এরকম-
    এক হিন্দু গৃহবধুর স্বামী প্যারালাইসিস রোগি। ঐ মহিলা নাড়ু বানায়। ঐ নাড়ু বানানোর সহযোগীতার জন্য সে ১৪ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে আসে। ঐ কিশোরটি বাড়িতে কাজ করতে আসার পর ঐ হিন্দু গৃহবধুর দ্বারা আকৃষ্ট হতে থাকে। নাটকের সিনে দেখানো হয়, গৃহবধু বাথরুমে গোসল করতে ঢুকলে, ঐ ছেলেটি বাথরুমে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে তার গোসল দৃশ্য দেখার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ঐ কিশোর ছেলেটি আবিষ্কার করে, সবার অগোচরে ঐ গৃহবধুটি ঘরের যুবক কাজের ছেলেটির সাথে নিয়মিত অবৈধ সম্পর্ক করে। এক পর্যায়ে ঐ কিশোর ছেলেটি ঐ গৃহবধুর কাছে গিয়ে বলে, আমার সাথেও তুমি অবৈধ সম্পর্ক করো, নয়ত সবাইকে তোমার ও যুবক কাজের ছেলের অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে দিবো।
    এ ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং এর হুমকির মুখে হিন্দু গৃহবধুটি কিশোর কাজের ছেলের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে রাজী হয় এবং ক্যামেরার সামনেই কাপড় খুলতে শুরু করে। ”
    বয়ঃসন্ধি নাটকের কাহিনী শুনে হয়ত আপনারা বলতে পারেন, নয়নদা এরকম একটি অশ্লীল বর্ণনা না দিলেও তো পারতেন। সত্যি বলতে, এ ধরনের একটি বর্ণনা দিলাম এই কারণে, বাংলাদেশের অনলাইন চ্যানেলগুলোতে ইতিমধ্যে ভারতের অনুকরণে এ ধরনের চুলকানি সৃষ্টি করা নাটকের সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এর প্রতিফলন যে দ্রুত টিভি মিডিয়া ও বড় পর্দায় ঘটবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
    লেখাটা যদিও বড় হয়ে যাচ্ছে, তবুও এবার লেখার মূল অংশে আসি। আপনারা জানেন, গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রনালয়ের আমন্ত্রণে ভারতের শীর্ষ দুই সিনেমা নির্মাতা মুকেশ ভাট ও রমেশ সিপ্পি এসেছিলো। তারা বাংলাদেশের সিনেমা ও নাটকের শীর্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাথে মত বিনিময় করে। এটা সবারই জানা, ভারত চাচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে সিনেমার বিষয়টি নিয়ে আদান প্রদান করা। মানে ভারতের সিনেমা বাংলাদেশের হলগুলোতে এভেইলএবলভাবে চলবে। তবে শুধু সিনেমা চলা নয়, দুইদেশের কালচার, নায়ক-নায়িকাও আদান-প্রদান হবে। পশ্চিমবঙ্গের নায়ক দেব বলেছেন- “দাও দুই বাংলা এক করে দাও”। ইতিমধ্যে জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়ার মত নায়িকারাও ভারতীয় ফিল্মে অভিনয় শুরু করে দিয়েছে। উল্লেখ্য এর আগেও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এফডিসি’র সাবেক এমডি পীযূষ বন্দোপাধ্যায়সহ অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা জগতের নেতৃবৃন্দের সাথে ঢাকায় মিটিং করেছে, সবার এক উদ্দেশ্য- দুই দেশের সিনেমাজগত একত্র করা। গত দুইদিন আগে বাংলাদেশের ভারতের যে শীর্ষ দুই সিনেমা নির্মাতা এসেছিলো, তারাও নিশ্চয়ই একই উদ্দেশ্যে এসেছিলো এতে কোন সন্দেহ নাই।
    একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছিলাম, বাংলাদেশে যখন ভারতীয় সিনেমা আমদানি করার কথা হলো, তখন বাংলাদেশের সিনেমার নায়ক-নায়িকা মাথায় কাফনের কাপড় বেধে প্রতিবাদ করেছিলো। বিষয়টি তখন থেমে গেছে, এমন মনে করা হলেও ভারত কিন্তু থেমে থাকেনি। তারা বাংলাদেশে নায়িকাদের নিয়ে ভারতে সিনেমা বানিয়ে কিংবা সরকারিভাবে মিটিং করে করে সবার মন জয় করতে চাইছে। তাদের কিন্তু সেই এক উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সাথে ভারতে সিনেমা কালচার আদান-প্রদান করা (আসলে আদান প্রদান নয়, বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে গিলে খাওয়া ও একচেটিয়া মার্কেট তৈরী উদ্দেশ্য)।
    বাংলাদেশের সাথে ভারতীয় সিনেমার মিক্সিং হলে হয়ত অনেকে খুশি হবেন, হয়ত ভাববেন, যাক এবার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দেখা যাবে, সিনেমার কাহিনীতে বৈচিত্র্য আসবে, ক্যামেরা একশন ভালো হবে, ইত্যাদি। কিন্তু সমস্যাও কিন্তু আসছে। ভারতীয় সিনেমা তথা সমাজের যে ভাইরাসগুলো আছে সেগুলো কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা হয়ে সমাজে প্রবেশ করবে। তখন মা-ছেলের অবৈধ সম্পর্কের কথা চিন্তা করেও বাংলাদেশীরা যৌন অনুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করবে, বয়ঃসন্ধি নাটকের মত কাহিনী নিয়ে ঘরের কাজের ছেলেদের থেকে গৃহকর্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে নাটক-সিনেমা নির্মিত হবে।
    একটা বইয়ে পড়েছিলাম, ব্যধিই সংক্রামক;স্বাস্থ্য নয়'। সিনেমা মিক্সিং হলে যে ভারতীয় ব্যধিগুলো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে, এতে কোন সন্দেহ নাই, শুধু দেখতে থাকুন।
    সবাইকে এত বড় লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
    লেখার জন্য প্রয়োজনীয় সূত্র:
    ১) খবর- ঢাকায় 'শোলে'র পরিচালক এবং 'আশিকি'র নির্মাতা
    (http://goo.gl/clT9T0)
    ২) খবর- বাংলাদেশের সিনেমা বাজার দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠছে ভারত (http://goo.gl/Hx2Atd)
    ৩) খবর- বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলবে ভারতীয় সিনেমা - আসাদুজ্জামান নূর
    (http://goo.gl/ybmYim)
    ৪) হিন্দি ছবি ঠেকাতে শিল্পীদের কাফন মিছিল
    (http://goo.gl/1wac9i)
    ৫) “হট সিন দেখো, তবে মা সেই হট সিনে থাকলে দেখো না”
    (http://goo.gl/prfmgE)
    ৬) অসম প্রেম নিয়ে ‘বয়ঃসন্ধি’!
    (http://goo.gl/4wfTco)
    ৭) 'থার্ড বেল ডটকম' নিয়ে হিল্লোল-নওশীন
    (http://goo.gl/g0XaVx)
    ৮) হিল্লোল-নওশীনের প্রথম ছবি
    (http://goo.gl/DZgbhx)

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728