বাংলাদেশের অসা্ম্প্রয়িকতার ভবিষ্যৎ পরিণতি
“হিন্দু-মুসলিমসহ সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে থাকবো, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়বো”---এটা কি সত্যি ?
যারা উপরের কথাটা বলেন, তারা ফেসবুকের সিস্টেমটা কখন লক্ষ্য করেছেন ? ফেসবুকে শত শত কোটি মানুষ আছে। এদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা অভ্যাস, নিয়ম-কানুন, পছন্দ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এমন একটা সিস্টেম করে দিয়েছে যেন প্রত্যেকে প্রত্যেকের কমিউনিটির মধ্যে সীমাবন্ধ থাকে, বাইরে থেকে যেন কেউ ঢুকতে না পারে। এ ধরনের কোটি কোটি কমিউনিটি আছে ফেসবুকে। ফেসবুক কিন্তু কখনই আপনাকে সহজে অন্য কমিউনিটিতে ঢুকতে দিবে না। কারণ অন্য কমিউনিটির কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে সে একসেপ্ট করবে না, আর বন্ধু না হলে তার স্ট্যাটাসগুলোও দেখতে পারবেন না। আবার ফেসবুক ঐ ব্যক্তিকে শুধু তার কমিউনিটির সাথে রিলেটেড আইডিগুলোকে সাজেস্ট করবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে। এভাবে করে ফেসবুক প্রত্যেকটি কমিউনিটিকে আলাদা আলাদা করে ভাগ করে দিয়েছে। যদি সব কমিউনিটি এক সাথে থাকতো তবে এতদিন সারা বিশ্বে তো অবশ্যই বাংলাদেশে বড় ধরনের মারামারি লেগে যেতো, এটাই হচ্ছে ফেসবুকের এত বড় কমিউনিটি তৈরীর ব্যবসায়ীক কৌশল। তবে বিভিন্ন সময় ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে যে দ্বন্দ্ব হয় সেটা কিন্তু এক কমিউনিটি অন্য কমিউনিটির বিষয়গুলো পছন্দ করে না বলেই। ব্লগের জনপ্রিয়তা কিন্তু কমে গিয়েছিলো ঐ কারণেই, কারণ ব্লগে প্রত্যেককে একই পেইজে পোস্ট দিতে হয়, যারা কারণে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এ কারণে ব্লগের (যেমন সামু) জনপ্রিয়তা এখন শূণ্যের কোঠায়।
এবার নিজেই একটু চিন্তা করুন। ফেসবুকে দুটি কমিউনিটি পাশাপাশি না থাকতে পারে, তবে বাস্তবে দুটো কমিউনিটি কিভাবে থাকবে ? হ্যা থাকতে পারে, তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই কালচার আদান প্রদান হবে। যেমন মুসলিম-হিন্দুরা থাকলে হিন্দুদের কিছু নিয়ম নীতি মুসলমানদের নিতে হবে, আবার মুসলমানদের কিছু নিয়ম নীতি হিন্দুদের গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য সমস্যা হচ্ছে তারা হিন্দুদের নিয়মনীতি গ্রহণ করতে পারে না, কারণ মুসলিম ধর্মের মূল ভিত্তি, হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তির সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। আর বাস্তবিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম অসাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞাটা আবার পুরোপুরি একপেশে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকার অর্থই হচ্ছে হিন্দুদের সংষ্কৃতি গ্রহণ করতে হবে মুসলমানদের। যেমন পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, হোলি পূজা, স্বরসতী পূজা, হিন্দুয়ানী শিক্ষা সিলেবাস সব অসাম্প্রদাযিকতা কথা বলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের উপর। অপরদিকে আপনি যদি হিন্দুদের বলেন-্ “এসো গরুর মাংশ খাই”, ব্যস তবেই গন্ডগোল বেধে যাবে।
মুসলমানদের শেষ নবী পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলেছিলেন- “মুশরিকদের (মূর্তি পূজারীদের) আরব থেকে বের করে দিও”। খলিফা হযরত ওমরের সময় সকল মূর্তি পূজারীকে আরব থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। হয়ত তিনি চিন্তা করেছিলেন- মুসলমানরা মূর্তি পূজারিদের সাথে থাকলে তাদের মধ্যে মূর্তি পূজারীদের প্রভাব আসতে পারে, সে কারণেই এ ব্যবস্থা।
বিষয়টি যে কতটুকু গুরুতর এখন বোঝা যায়। বর্তমান সময়ে মুসলমানরা যে অধর্ম পালন করে তার বেশিরভাগই কিন্তু ব্রিটিশ ও হিন্দুদের থেকে পাওয়া। যেমন মুসলিম মহিলারা বোরকা পরে থাকে। হয়ত কিছু মুসলিম মেয়ে হিন্দুদের মেয়েদের বোরকা বিহীন অবস্থায় দেখে ভালো লাগলো, বাস তারা বোরকা ছেড়ে দিলো। আবার মোঘল আমলে দেখা যায়, মুসলিম শাসকরা পর্যন্ত পাগড়ি পরতো, দাড়ি রাখতো, ইসলামী পোষাক পরতো। কিন্তু ব্রিটিশরা এসে মুসলমানদের ভিন্ন কালচার শিখিয়ে দিয়ে গেলো। এখন বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে ব্রিটিশদের শার্টপ্যান্ট হয়ে গেছে জাতীয় পোষাক।
কথাগুলো বললাম এ কারণে- এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মুসলমানরা হিন্দুদের সাথে থাকতে থাকতে এখন শেষ পর্যন্তু শিক্ষা সিলেবাসে সকল ইসলামী চাপ্টার তুলে দিয়ে রামায়ন, লীলাকীর্তন, গোমাতাবাদ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আপনি তার প্রতিবাদ করলে হয়ত বলা হবে- “আরে এতটুকু করলে কি হয়, এত সাম্প্রদায়িক চিন্তা করো কেন ?”
কিন্তু ঐ এতটুক করতে করতে এখন মুসলমানদের দিন শেষ, মুসলমান অমুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করতে করতে এখন নিজেরাই অমুসলিম হয়ে গেছে। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরী, যতটুকু আছে সেটুকুই সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি অমুসলিম থেকে কালচার যেন নতুন করে ঢুকতে না সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে । নয়ত আর কিছুদিন এভাবে চললে দেখা যাবে, মুসলিম আর মুসলিম থাকবে না, ‘হরে রাম, হরে কৃষ্ণ’ বলা অত্যাধুনিক (!) অসাম্প্রদায়িক রূপে রূপান্তরিত হবে।
No comments