মিডিয়া ও কানে ধরিয়েরা কি শ্যামল কান্তির ভালো করলো না খারাপ করলো ?
বাস্তবটা যদি আপনি চিন্তা করেন, তবে বুঝবেন-
মিডিয়া জগত কিংবা কান ধরিয়ে জগত উপর দিয়ে যতই ঐ শিক্ষকের জন্য মায়া দেখাক না কেন, তারা কিন্তু ঐ শিক্ষকের মোটেও ভালো করছে না, বরং খারাপ করছে।
যেমন ধরুন-
১) ঐ স্কুলের নাম পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে তিন জন প্রতিষ্ঠাতার নাম আছে। গতকালকে শিক্ষামন্ত্রী যে ম্যানেজিং কমিটিকে বরখাস্ত করেছে তার মধ্যে লতিফ সাহেবও আছে। এখন ঐ শ্যামল কান্তি যদি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও থাকে, তবে কি আর কখনও প্রতিষ্ঠাতার সম্মুখিন হতে পারবে ?
২) স্কুলটিতে বড় অনুদান দেয় ব্যবসায়ী এমপি সেলিম ওসমান। কিছুদিন আগে ঐ স্কুলে এমপি সেলিম ওসমান ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে, একটি গ্রাম্য স্কুলের জন্য এটা অবশ্যই বড় একটি অনুদান । এ ঘটনাকে কেন্দ্র মিডিয়া যেভাবে সেলিম ওসমানকে নাজেহাল করলো, এতে ইচ্ছা অনিচ্ছায় সেলিম ওসমানের সাথে শ্যামল কান্তির সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলো। ধরলাম শ্যামল কান্তি স্কুলে ফিরে এলো, কিন্তু সেলিম ওসমান ঐ স্কুলে আর অনুদান দিলো না, এক্ষেত্রে কার লাভ হলো ? স্কুল এখন কার অনুদানে চলবে ? একাত্তর টিভি কি স্কুলকে কোন অনুদান দেবে ?
৩) পুরো ঘটনা নিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তির উপর পুরো এলাকাবাসী মারাত্মক ক্ষেপা। মিডিয়া এই ঘটনায় আরো ঘি ঢাললো। আজকেও নারায়নগঞ্জের অধিকাংশ মসজিদ থেকে শ্যামল কান্তির ফাসি চেয়ে মিছিল হবে। ধরে নিলাম, শ্যামল কান্তি স্কুলের শিক্ষক পদে পুনর্বহাল হলো, কিন্তু সে কি আদৌ সেখানে আর শিক্ষকতা করতে পারবে ?
৪) অনেকে বোকার মত বলছে, ‘শ্যামল কান্তি যদি কোন অপরাধ করে থাকে, তবে দেশে আইন আছে, বিচারবিভাগ আছে, তারা সেটার বিচার করবে, এমপি তার বিচার করার কে ’?
আসলে যারা এ ধরনের বক্তব্য দেয়, তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নাই, এ কারণেই তারা কান ধরে দাড়াচ্ছে সবাই। বাংলাদেশে কয়টা বিচার-আচার বিচারবিভাগ পর্যন্ত গড়ায়, তারাই বলুক ? গ্রাম গঞ্জের অধিকাংশ বিচার-আচার গ্রাম্য পর্যায়ে চেয়্যারম্যান-মেম্বার-পঞ্চায়েতই করে থাকে। সে হিসেবে ৫-১০% বিচার-আচার বিচারবিভাগ পর্যন্ত গড়ায় কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, অধিকাংশ এলাকাতেই ফয়সালা করা হয় এবং জনগণ তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়, এভাবেই গ্রামের নিয়ম-প্রথা গড়ে উঠেছে। সত্যি বলতে- সারা দেশের সব বিচার করার ক্ষমতা বাংলাদেশের বিচারবিভাগের মোটেও নেই, যে কয়টা মামলা আসে তাই এক-একটা ১০-১২ বছর ঝুলে রাখে বিচারবিভাগ।
এখন নাস্তিক মিডিয়া ও কানধরিয়েরা যতই বলুক, ‘তারা শিক্ষককে সম্মান দিয়েছে, শিক্ষকের উপকার করেছে’, আমি বলবো- ‘মোটেও না’। তারা ঐ শিক্ষকের বিরাট ক্ষতি করেছে। নিজ স্বার্থের জন্য শুধু ঐ শিক্ষককে ব্যবহার করেছে মাত্র। কিন্তু সেই জন্য শিক্ষককে করেছে ভিটেমাটি ছাড়া । আসলে বাংলাদেশের মিডিয়া জগত ও কানধরিয়ে জগত উভয়েরই দেশের মূল্যবোধের ধারেকাছেও নেই। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্য আর শাহবাগ মোড়ে দাড়িয়ে ভাবলো, ‘এটাই মনে হয় পুরো বাংলাদেশে’। না রাজু ভাষ্কর্য্য আর শাহবাগ মোড় সারা বাংলাদেশ নয়, সারা দেশের ৮৫ হাজার গ্রামের মানুষ যে চিন্তা-চেতনা ধারণ করে সেটা তাদের কথিত চেতনার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও বিপরীতমুখী।
তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো, মিডিয়া ও কানধরিয়েরা যেন বাস্তবতা ফিরে আসে, এসব আউফ-ফাউল রিপোর্ট করে না করে শ্যামল কান্তিদের বাচিয়ে রাখে। ধন্যবাদ।
আমার ব্লগ লিঙ্ক- http://www.noyonchatterjee.com/
পোস্টটি পাবেন -http://www.noyonchatterjee.com/2016/05/blog-post_21.html
আমার ফেসবুক পেইজ - https://www.facebook.com/realnoyon2
বি : দ্র: এই পেইজ ছাড়া আমার আর কোন পেইজ/আইডি/গ্রুপ নেই
No comments