এবার দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় নারায়নগঞ্জে ঘটে যাওয়া ঘটনার পূর্ণ বিবরণ-
রিকু আমির, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে ফিরে :
দশম শ্রেণিতে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাসটি নিচ্ছিলেন শিক্ষক উত্তম। ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ একটি পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে পড়েছিল। শিক্ষক উত্তম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। এ সময় ক্লাসে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। এসেই তিনি সোজা পেছনে ছাত্রীদের সারিতে গিয়ে বলেন, তোরা কী মানুষ হবি না। এরপর ছাত্রদের পেছনের সারিতে গিয়ে বলেন, তোরা কী মানুষ হবি না। তোদের আল্লাও নাপাক, তোরাও নাপাক। গতকাল বুধবার ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ব্যবসায়িক শিক্ষা শাখার ছাত্র রিফাত আমাদের অর্থনীতিকে এসব কথা বলেন।
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ‘তোদের আল্লাও নাপাক, তোরাও নাপাক’ বলা এবং এ রিফাতকে মারধর, জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ‘তোদের আল্লাও নাপাক, তোরাও নাপাক’ কথা বলা কেন্দ্র করে জনসমক্ষে কান ধরে উঠবস করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভদ্র। রিফাত জানান, শ্যামল কান্তি সব শিক্ষার্থীদের তোদের আল্লাও নাপাক, তোরাও নাপাক বলে ক্লাস থেকে চলে যান। এরপর কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষক উত্তমের কাছে বলতে থাকেন, ধর্ম, আল্লাহ নিয়ে তো স্যার (শ্যামল কান্তি) এভাবে কিছু বলতে পারেন না। এরপর উত্তম প্রধান শিক্ষককে গিয়ে বলেন, স্যার, ওদের ধর্ম ওরা পালন করবে, আমাদের ধর্ম আমরা পালন করব। কিন্তু এভাবে কেন এ কথা বলতে গেলেন।
রিফাতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী- এর কিছুক্ষণ পর শ্যামল কান্তি ওই ক্লাসে আবার আসেন এবং খাতায় লিখারত রিফাতকে ডেকে নেন এবং শার্টের কলার চেপে ধরে হেঁচকা টান দেন ক্লাস ভর্তি শিক্ষার্থীদের সামনেই। এতে রিফাতের শার্ট ছিড়ে বোতাম মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় শ্যামল কান্তি রিফাতের বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগে ৮/১০টি ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে পেটে একটি ঘুষি দেন। এ সময় রিফাত চিৎকার করে কয়েকবার বলতে থাকেন, ‘আল্লা আমাকে বাঁচাও’। অভিযোগÑ এ সময়ও শ্যামল কান্তি রিফাতকে বলতে থাকেন ‘তোদের আল্লাও নাপাক, তোরাও নাপাক, আল্লা বলতে কিছু নাই, ওসব মিথ্যা।
পেটে ঘুষির পর রিফাত ক্লাসের মেঝেতে পড়ে যায় এবং বাড়ি যাওয়ার অনুনয় করেন। কিন্তু শ্যামল কান্তি রিফাতকে শাসিয়ে নিয়ে আসেন লাইব্রেরিতে। এ সময় তিনি স্কুলের পাশে একটি চা দোকান থেকে একটি প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ আনিয়ে নিজ হাতে জোর করে রিফাতের মুখে তুলে দেন। এরপর রিফাতের বমি হয়। রিফাত শ্যামল কান্তিকে জানিয়েছিল, তার পেট খালি, এ অবস্থায় ওষুধ খাওয়া সম্ভব নয়, তাকে যেন বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব পরোয়া করেননি শ্যামল কান্তি। উল্টো তিনি শাসিয়ে রিফাতকে বলেন, ঘটনা কাউকে জানালে ভালো হবে না। মেরে দরকার পড়লে দুই হাজার টাকা দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। স্কুল শেষে রিফাত বাড়ি গিয়ে মা রীনা বেগমসহ বড় তিন বোনকে সব বর্ণনা করে।
আমাদের অর্থনীতি রিফাতের বক্তব্য যাচাই করে আরও ছয় শিক্ষার্থীর মাধ্যমে। তারা রিফাতের সহপাঠী, চারজন ছাত্র, দুজন ছাত্রী। রিফাত যা বলেছে, এসব শিক্ষার্থীরাও তা-ই বলেছে। এমন একজন শিক্ষার্থী আসিফ। তিনি বলেন, আল্লাহ নিয়ে স্যার এমন কথা কেন কইব। রীনা বেগম আমাদের অর্থনীতিকে জানান, উনি শিক্ষক, উনি খুব সম্মানের। কিন্তু আল্লাহ নিয়ে এ ধরনের কথা কেন বলবেন, গায়ে কেন হাত তুলবেন, জোর করে কেন ওষুধ খাইয়ে দেবেন। এই যে শিক্ষামন্ত্রী কত কথা বলছেন, সেদিন শিক্ষাসচিবও এসে গেছেন। কিন্তু আমার ছেলের কিছু হলে তারা কি পারবেন ফিরিয়ে দিতে? আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার ছেলে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আপনেরা খোঁজ লইয়া দেহেন, কোনো আজেবাজে কাজে আমার ছেলে আছে কি-না। এমন ছেলেটারে কী করছে ওই স্যারে। এইটা কেমনে সহ্য করুম। দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের চার সন্তানের মধ্যে রিফাত সবার ছোট।
---সূত্র: দৈনিক আমাদের অর্থনীতি 2016/05/19
---লিঙ্ক:www.amaderorthonete.com/content/2016/05/19/news0577.htm
---সেভ লিঙ্ক: http://archive.is/2jtiw
---এর আগে বিবিসিও স্বীকার করেছে কটূক্তির ঘটনা সত্য: http://goo.gl/ZB3tqs
No comments