আমেরিকার এবং বাংলাদেশের আর্মিতে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে বিশ্লেষণ
আমেরিকান আর্মিতে ‘চ্যাপলিন কোর’ নামক একটি অংশ আছে। এদের কাজ হচ্ছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সদস্যদের ধর্মীয়ভাবে উব্ধুদ্ধ করা। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় এই কোরের কাজ- ধর্মীয় মতবাদ দিয়ে সদস্যদের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করা, এদের মূলনীতি- For God and Country। আমেরিকান রেভুলুশনারি ওয়ার, আমেরিকান সিভিল ওয়ার, স্প্যানিশ-আমেরিকান ওয়ার, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, উপসাগরিয় যুদ্ধ, সোমালি সিভিল ওয়ার, কসোভো যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধে চ্যাপলিন কোরের কার্যক্রম দেখা যায়। আমেরিকার ইতিহাসের শুরু থেকেই মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যে এই কোরের অস্তিত্ব ছিলো, যার বয়স প্রায় ২৪১ বছর। যেহেতু আমেরিকার অধিকাংশ সেনা সদস্য খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, তাই বলা যায় মার্কিন যুদ্ধগুলোতে সেনা কর্মকর্তাদের এ কোরের মাধ্যমের বোঝানো হয় “প্রতিটি যুদ্ধই এক একটি ক্রুসেড বা ধর্মীয় যুদ্ধ, তাই তোমাকে ক্রুশের শক্তি সঞ্চয় করেই কাজ করতে হবে”।
যাই হোক, আমি বলতে চাচ্ছিলাম, আমেরিকা কিন্তু দাবি করে তারা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং কোন দেশে যদি ধর্মীয় (বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে) যোদ্ধাদের আবির্ভাব ঘটে তবে তারা সেটা দমন করতে যায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা কিন্তু নিজেরাই আর্মির মধ্যে ধর্মীয় চেতনা ব্যবহার করে, যা তাদের সাংবিধানিক সেক্যুলারিজমের পরিপন্থী।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, “বাংলাদেশ আর্মির মধ্যেও ধর্মীয় শিক্ষক (আরটি) আছে, তবে সমস্যা কোথায় ?” আসলে বাংলাদেশের আরটি ও আমেরিকার চ্যাপলিন কোরের মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে। বাংলাদেশের আরটি (রিলিজিয়াস টিচার) এর কাজ শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো, কিন্তু যুদ্ধে ধর্মীয় অংশ হিসেবে ধর্মীয় চেতনায় উব্ধুদ্ধ করা নয়। কিন্তু আমেরিকান চ্যাপলিন কোরের কাজ হচ্ছে, যুদ্ধে আর্মিদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা বা ক্রুসেডীয় চেতনা সৃষ্টি করা। এছাড়া বাংলাদেশে আরটি হচ্ছে নন গ্যাজেটেড সদস্য, বেতন একজন সৈনিকের মত, অর্থাৎ খুবই নিচু পদের। বাংলাদেশে সৈনিক র্যাঙ্কের একজন ননগ্যাজেটেড আরটি যখন ধর্মীয় শিক্ষা দেয় তখন সেটা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। অপরদিকে আমেরিকার চ্যাপলিন কোরের প্রধানের মর্যাদা হচ্ছে মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের, অন্যন্য পদগুলো অফিসারের সমতূল্য। স্বাভাবিকভাবে একজন মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের অফিসার যখন ধর্মীয় শিক্ষা দেবে, সেটা অবশ্যই সকল সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকের মধ্যে বিরাট প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং সবাইকে উব্ধুদ্ধ করতে পারে।
সত্যিই বলতে মুসলমানরা সেক্যুালারিজম সেক্যুালারিজম করতে করতে শেষ হয়ে গেছে। অপরদিকে যে অমুসলিম জাতি মুসলমানদের সেক্যুালারিজম শিক্ষা দিয়েছে তারা কিন্তু যায়গা মত মোটেও সেক্যুালারিজম গ্রহণ করেনি, বরং কট্টর ধর্মপন্থীই রয়েছে, অর্থাৎ সোজা ভাষায় ধোকা খেয়েছে বোকা মুসলমানরা।
দেখতে পারেন-en.wikipedia.org/wiki/Chaplain_Corps_(United_States_Army)
No comments