বঙ্গবাহাদুরের পরে এলো বাংলার বাঘিনী
হ্যা আমি অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী মার্গারিটা মামুন নামের সেই মেয়েটির কথা বলছি। বঙ্গবাহাদুরের পরে যাকে নিয়ে মিডিয়া খুব লাফালাফি করছে। একটু পর পর তার পশ্চাৎ দেশের ভাজ বের করা উৎকট সব ছবি পাবলিশ করে বলছে- “আমরা ওকে নিয়ে একটু গর্ব করতেই পারি”। অবশ্যই পারেন, আপনাদের তো কেউ গর্ব করতে নিষেধ করেনি। তবে সাবধান, নিজে গর্বে আবার গর্ভবতী হয়ে যায়েন না।
দেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাহেবও কিন্তু কম যান না। পর পর চারটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঐ একটি মাত্র মেয়েটিকে নিয়ে। সাথে ক্লওজ ছবি তুলেছেন, বার বার বিনীত অনুরোধ করেছেন দেশেল আসার জন্য। এমনকি পশ্চাতের ভাজ বের করা একটা ছবি নিজের ভেরিভাইড পেইজেও আপলোড করে দিয়েছেন। তবে আমি দুঃখ পেয়েছি ভিন্ন কারণে। এই তো কিছুদিন আগে দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইমামকে আমেরিকায় গুলি করে হত্যা করেছিলো সন্ত্রাসীরা। কিন্তু দুঃখের বিষয়- পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে মার্গারিটা মামুন সাথে ক্লওজ হয়ে ছবিখানা তুললেন, ঠিক সেভাবে যদি ঐ দুই ইমামের আ্ত্মীয়দের সাথে ছবি তুলতেন, তাদের সান্ত্বনা দিতেন তবে আরো ভালো লাগতো।
যাই হোক, কথা বলছিলাম সদ্য গজিয়ে ওঠা বাংলার বাঘিনীকে নিয়ে। প্র্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, যুগান্তরসহ তামাম খাঃপো গংরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাঘিনীর পশ্চাতের ভাজে দেশত্ববোধ খুজে ফিরছে। আসলে বাংলাদেশী জাতিটাই এমন, এরা নিজেরটা ভালোটা ফেলে অপরের পচাটা নিয়ে গর্ববোধ করতে পছন্দ করে।
যেমন ধরুন-
বঙ্গবাহাদুর। আসলো ভারত থেকে পালিয়ে, তাকে নাম দেওয়া হলো কি না বাহাদুর, তাও আবার বাংলার !! আবার নব্য গজিয়ে ওঠেছে বাংলার বাঘিনী। বাংলাদেশী হিসেবে তার একমাত্র যো্গ্যতা এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনতে পারা। আমি বলি- “ভাগ্যিস বাংলার বাঘিনী বাংলাদেশ থেকে যায়নি। তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যেতো। তখন চেতনাবাজরা একযোগে বলতো- “আজ থেকে সকল নারী এমনি মাদ্রাসা ছাত্রীদের পর্যন্ত মার্গারিটা মামুনের মত পোষাক পরতে হবে, প্রয়োজনে পশ্চাতের ভাজ দেখাতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীবাদ দূর করা সম্ভব।”
আমি দেখেছি, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগকারীদের মধ্যে অযাচিত ট্যালেন্ট খোজার চেষ্টা করে। আসলে আমি ব্যাপারটি নিয়ে এতটা আগ্রহী নই। কারণ কারো পারফরমেন্স ভালো হলেই সে মানুষ ভালো হবে এটা বলা যায় না (আমার ভালো মানুষের তালিকায় অবশ্যই মার্গারিটা মামুন নেই), বরং সেই ভালো মানুষ হয়, যে নিজের পারফরমেন্সটা দেশের জন্য কাজে লাগিয়ে থাকে।
যেমন ধরুন- সিলেটের রাগীব আলী। সে এ সময় জীবিকার সন্ধানে লন্ডনে গিয়েছে। সেখানে ভালো ইনকাম করেছে, এরপর বাংলাদেশে জনকল্যানে বাকি সময়, বুদ্ধি ও টাকা ব্যয় করেছে। অনেক প্রবাসী ভাইরাও একইভাবে দেশের ঘরসংসার চালাচ্ছে। কিন্তু অনেক জ্ঞানপাপী আছে যারা বিদেশে দিয়ে আর আসতে চায় না, সামান্য টাকার জন্য নিজের পুরো জ্ঞান বুদ্ধি ও জীবনকে পরদেশে বিক্রি করে দেয়। এরা সামান্য টাকার জন্য জন্য সারাজীবন ব্যয় করে, কিন্তু নিজের দেশের কথা চিন্তাও করে না। এদেরকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দেই কিভাবে বলুন ?
অথচ দেখা যায়- দেশের মিডিয়া ও কর্তা ব্যক্তিরা ঐ বিক্রি হওয়া লোকগুলোকেই বেশি হাইলাইট করে। দেশীয় ট্যালেন্টদের দামই দেয় না। বরং কখন লাথি মেরে ফেলে দেওয়া যায় সেই তালে থাকে। কিন্তু বিদেশের বঙ্গবাহাদুর বা বাংলার বাঘিনী টাইপের ছা-পোষা পেলে লাফিয়ে ধরার চেষ্টা করে, নিজেরাই উপাধি দেয়।
আসলে বাংলাদেশী জাতটাই এমন। কোন পন্যের প্যাকেটে যদি ‘দেশীয় প্রস্তুত’ লেখা থাকে তবে কিনতে চায় না। কিন্তু প্যাকেটে যদি ‘মেইড ইন চায়না’, ‘মেইড ইন জাপান’, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা থাকে, তবে ২-৩ গুন বেশি দাম দিয়ে কিনে নেয়, যদিও পণ্যের মান হাজার গুনে খারাপ হোক না কেন।
:)
ReplyDelete