সরকার নির্ধারিত স্পটে পশু কোরবানি করতে জনগণের মধ্যে যেসকল মানবীয় গুনাবলী থাকা আবশ্যক
১) জনগণকে অসীম ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদের সিরিয়াল ধরার মনমানসিকতা থাকতে হবে। দেখা যাবে সকাল বেলা গরু সিরিয়াল দেওয়ার পর সন্ধা বেলা জবাই হবে। কিংবা বলা হবে আগামী পরশু দিন আপনার গরুর সিরিয়াল।
২) জনগণকে খুব বিনয়ী হবে। এত গরুর ভিড়ে গরু চেঞ্চ হয়ে গেলেও মারামারি করা যাবে না। একজনের মাংশ অন্যজনের কাছে গেলে কিংবা মাংশ কম পেলে মারামারি করা যাবে না।
৩) যেহেতু সরকারী লোকজন মাংশ বণ্টনের বিষয়টিও দেখবে, তাই কোরবানী মাংশ বাসায় নেওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে। অস্ত্রে মুখে যদি কেউ মাংশ নিয়ে যায়, তবে প্রতিবাদ করা যাবে না।
৪) গরুর মধ্যে শুধু নম্বর থাকবে, কিন্তু পাবলিক মাঠে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কারণ এত (গরু প্রতি ৫ জন) পাবলিক থাকলে মানুষের ভীড়ে গরু প্রসেসিং সম্ভব নয়। তাই ১০০ কেজির গরু পাঠিয়ে যদি সরকারি লোকজন ৫ কেজি মাংশ ফেরত দেয় তবে সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৫) বাংলাদেশের বেশিরভাগ গরু ৭ ভাগে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মাংশ পাওয়ার পর ফের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। তাই সেটাও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬) এত কাজের ভীড়ে চামড়ার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই চামড়ার দায়িত্ব আগে থেকেই ছাত্রলীগকে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
৭) যেহেতু স্পট অনেকের বাসা থেকেই দূরে হবে, তাই এত মাংশ বহন করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকারিভাবে যদি লক্ষ লক্ষ গাড়ির ব্যবস্থা থাকে তবে সেটা সম্ভব। আর যদি সরকার গাড়ির ব্যবস্থা না করে তবে ঈদের দিন ছেলে-মেলে-জামাই-বউ মিলে কান্ধে করে গরু মাংশ বাসায় নিয়ে আসতে হবে।
৮) এক যায়গায় একাধিক গরু প্রসেসিং করলে সেখানে রক্ত জমে যাবে। তাই পুনরায় ব্যবহার করার আগে পানি দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। এজন্য সরকারীভাবে ওয়াসাকে কয়েক লক্ষ পানির গাড়ি রেডি রাখতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে- মাটির মাঠে পানি দিলে কিন্তু কাদা হয়ে যাবে। তাই রক্ত-কাদার মধ্যেই সব সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।
৯) জনগণকে খুব সহনশীল হতে হবে। সরকার কসাই বাবদ যে ফিক্সড মূল্য ঠিক করে দিয়েছে সেটার কমবেশি করতে পারবে না। কসাই যতটুকু কাজ করবে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ কসাইকে আরো গরু প্রসেসিং করতে হবে।
১০) পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের কমপক্ষে ১ লক্ষ (শুধু ঢাকা শহরের জন্য) পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন হবে, তবে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিলে আরো ভালো হয়। কারণ এত বড় একটি প্রক্রিয়া চালানোর সময় যদি মারামারি হয় তবে বড় ধরনের ম্যাসাকার হওয়া সম্ভবনা থাকবে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশ-সেনাবাহিনী ছাড়া কারো পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
১১) পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক হাজার কোটির টাকার বাজেট প্রয়োজন হবে। সামান্য একটি মাঠের মধ্যে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় (যে মাঠ ছিলো আর্মিদের নিয়ন্ত্রণে) সরকারি বাহিনী নিয়ম শৃঙ্খলা মেইনটেইন করতে পারেনি। সামান্য ৫ মিনিটের গানের জন্য যদি সামান্য নিয়ম মেইনটেইন করা না যায়, তবে গরু প্রসেসিং এর মত এত জটিল একটি প্রক্রিয়া সরকার কিভাবে মেইনটেইন করবে, সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।
উপরের সকল আয়োজন শুধু সিটি কর্পোরেশন কর্মীদের কাজ সহজ করে দেওয়ার জন্য। যেন তারা সহজে কোরবানীর আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারে। সরকারের এই মহাযজ্ঞ অনেক কঠিন। আমি বোকা সোকা মানুষ। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম তবে এত কষ্ট করতাম না। শুধু একটা নোটিশ দিতাম- ঈদের দিন সন্ধা ৬টার মধ্যে যার যার বাসার সামনে রক্ত-ময়লা পরিষ্কার করতে হবে, এবং নিদ্দিষ্ট স্থানে ময়লার কনটেইনার রাখা আছে সেখানে ময়লা পৌছে দিতে হবে। জনগণকে নিজ দায়িত্বে কাজ করতে হবে। এটাই সরকারি আদেশ। ব্যস দেখতেন প্রত্যেক মানুষ নিজ দায়িত্বে ময়লার কন্টটেইনারে ময়লা রেখে আসছে, সিটি কর্পোরেশন কর্মীরা এসে শুধু গাড়ি তুলে নিয়ে যাবে। এত মহাযজ্ঞ করার কোন মানে হয় না, প্রথম দিনেই সব সাফ।
No comments