Header Ads

ad728
  • Breaking News

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নাসিরনগরের নামকরণ, কি শিক্ষা দেয় ?




    গত কয়েকদিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দু কর্তৃক ইসলাম অবমাননা ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনা সবারই জানা। আমি এই পোস্টে ঐ ঘটনার দিকে যাবো না, তবে আলোচনা করবো, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ ও ‘নাসিরনগর’ এই দুইটি নাম কিভাবে এলো এবং নাম দুটোর ইতিহাস মুসলমানদের কি শিক্ষা দেয়?
    প্রথমেই বলে রাখি, ১৯৮৪ সালের আগ পর্যন্ত ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ জেলা কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমার নাম ছিলো। পরবর্তীতে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ মহকুমা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সৃষ্টি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিন্তু ঐ মহকুমার আদি নাম ছিলো না। আদি নাম ছিলো ‘নাসিরনগর’।১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়।
    ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের নামকরণে ইতিহাস -
    মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অর্ন্তগত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। সেখানেই দিল্লী থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ। সে সময় ধর্মপ্রচারক কাজী মাহমুদ শাহ ঐ এলাকায় মুসলমানদের ধর্ম পালনের সুবিধার্থে বসবাসরত ব্রাহ্মণ পরিবারদের বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ 'বাওন বাইরা' বা ‘ব্রাহ্মণ বেড়িয়ে যাও’। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি। উল্লেখ্য বহুল প্রচারের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি পরিবর্তিত হয়ে বি-বাড়িয়া ধারণ করতে থাকে। কিন্তু আওয়ামী সরকার আসার পর ২০১১ সালে নামের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে যে, এখন থেকে কেউ বি-বাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে পারবে না, সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে হবে।
    এখানে উল্লেখ্যযোগ্য- ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার আগের নাম ছিলো নাসিরনগর, যা ব্রিটিশ আমলে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু সেই নাসিরনগর নামটি এখনও জেলার একটি উল্লেখযোগ্য উপজেলার নাম হিসেবে বর্তমান আছে। এখন কথা হচ্ছে ‘নাসিরনগর’ নামটি আসলো কোথা থেকে ??
    নাসিরনগরের নামের উৎপত্তি হয়েছে সিলেটের বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক হযরত শাহজালালের বিখ্যাত সেনাপতি হযরত নাসির উদ্দিনের নাম অনুসারে। ইতিহাস বলে সেনাপতি নাসির উদ্দিন বাহিনীর কাছেই পরাজিত হয়েছিলো হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দ। ইতিহাস আরো বলে- হযরত শাহজালালের সেনাপতি নাসির উদ্দিনের আজানের শব্দেই হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দের বিশাল ভবন ধসে পড়েছিলো।
    তাই আশাকরি বুঝতে পারছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নাসিরনগর এই দু’টি শব্দের মধ্যে কি চেতনা লুকিয়ে আছে ??
    তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উল্লেখযোগ্য জেলা হিসেবে দাবি করে। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে কথিত বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের জন্ম এই জেলায়। উল্লেখ্য ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ করে। কিন্তু হিন্দুরা মনে করে এই বঙ্গভঙ্গ হলে হিন্দু জমিদাররা তাদের ক্ষমতা হারাবে, আর মুসলমানদের উন্নতি হয়ে যাবে। এই তত্ত্ব থেকে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করতে থাকে, কারণ তারা কখনই চাইতো না মুসলমানদের উন্নতি হোক। ঐ সময় বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের নেতা কুখ্যাত উগ্রহিন্দুত্ববাদী ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীর নেতৃত্বে বি-বাড়িয়ার উল্লাস কর দত্তও ছিলো। এ বিরোধীতায় ক্ষুদিরামের ফাসি হলেও উল্লাস কর দত্তকে আন্দামানে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলো ব্রিটিশরা।
    আমি আগেই বলেছি, ব্রাহ্মণাড়িয়া জেলা ছিলো সরাইল পরগণার অন্তর্ভূক্ত, আর সরাইল পরগণাকে মধ্যযুগে ‍সৃষ্টি করেছিলো পাঠান সুলতানরা। হয়ত সেখানে কিছু হিন্দুও বসবাস করতো। মধ্যযুগে ধর্মপ্রচারক কাজী মাহমুদ শাহ যে হিন্দুদের ঐ এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম কারণ হিন্দুদের অসভ্য জীবন-যাপন, যাদের সাথে মুসলমানদের একসাথে থাকা সম্ভব ছিলো না। মূলত মুসলমানদের আগমণের কারণেই জংলী হিন্দুরা কিছুটা হলেও সভ্যতা শিখতে পেরেছিলো, যদিও সব অসভ্যতা তারা সহজে ছাড়তে পারেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হিন্দুরা কেমন ছিলো এটা জানতে জেলায় হিন্দুদের কিছু আদি স্থাপনার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। যেমন ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, বিদ্যাকুট সতীদাহ মন্দির, যা নবীনগর উপজেলায় অবস্থিত। মন্দিরটি তৈরী করেছিলো রাম মানিক নামক এক হিন্দু। সে সময় হিন্দু নারীরা বিধবা হলে তাদের মৃতস্বামীর সাথে জীবন্ত দাহ করা হতো। এই মন্দিরে সেই জীবন্ত নারী দাহের কাজটি চলতো। মন্দিরের স্থানটি ভুতুড়ে বাড়ির মত নির্জন একটি জায়গা। কোন হিন্দু নারীই আগুনে পুড়তে চাইতো না। তাই তাকে জোর করে এই নির্জনস্থানে মন্দিরে এনে আগুনে নিক্ষেপ করে জোরে ঢাক এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানো হত, যেন মানুষের কাছে ঐ অসহায় নারীর চিৎকারের শব্দ না পৌছায়। ১৮৩৫ সনে সর্বশেষ এই মন্দিরে মন্দির তৈরীকারী রাম মানিকের মাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728