দাড়ি-টুপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাড় করাতে চাচ্ছে মিডিয়া
গত ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধায় চ্যানেল আইতে একটি নাটক/টেলিফিল্ম দেখানো হয়, সেখানে রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী বলতে দাড়ি-টুপি পরিহিত দুই হুজুরকে দেখানো হয়, যেখানে তারা মানুষ হত্যা করে উদ্ভট নৃত্য প্রদর্শন করছিলো। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে অনেক স্থানে নাটিকার মাধ্যমে প্রতিকীভাবে ‘স্বাধীনতার বিরোধী’ প্রদর্শন করা হয়, যেখানে দেখা যায়-দাড়ি-টুপি ওয়ালা হুজুররা নারীদের শাড়ি ধরে টানাটানি করছে। গত ২০১১ সালে ২৪শে ডিসেম্বর ৬:৩০ মিনিটে একুশে টিভিতে একটি অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয় । যেখানে দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিকে বলা হয় রাজাকারের পোষাক। এবং প্রতিযোগীতার ইভেন্টটি ছিলো কে কত তাড়াতাড়ি রাজাকারের পোষাক মানে টুপি-পাঞ্জাবি খুলে দাড়ি শেভ করতে পারে।
অথচ ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায় কিন্তু ভিন্নচিত্র। একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধরা অনেক স্থানে রাজাকারদের ধরে পিটানি দিয়েছিলো যার ছবি পাওয়া যায়। অনেক ছবিতে পাওয়া যায় রাজাকাররা ট্রেনিং নিচ্ছে। কিন্তু কোথাও দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের (মসজিদের ইমাম সাহেবদের মত) দেখা যায় না। আবার অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পড়েই যুদ্ধ করেছে এমন ছবিও পাওয়া যায়। তাহলে ঢালাওভাবে কেন দাড়ি-টুপিকে মুক্তিযুদ্ধের শত্রু হিসেবে দেখানো হচ্ছে ? নাকি একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলাম আর মুক্তিযুদ্ধকে পরষ্পরের বিপরীতে দাড় করিয়ে জাতির মধ্যে বিভেদ ঘটাচ্ছে ??
বলাবাহুল্য, হুজুর শ্রেণীকে যদি রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে পাবর্ত্য উপজাতি শ্রেণীকেও রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ উপজাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও রাজাকার ছিলো। চাকমা উপজাতিদের প্রধান (রাজা) ত্রিদিব রায় কিন্তু একাত্তরে শীর্ষ রাজাকার ছিলো। সে হিসেবে উপজাতিদেরও তাহলে রাজাকার হিসেবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করা উচিত।
শুধু তাই নয়, ৭১ সালে আমেরিকা ছিলো পাকিস্তানের ঘনিষ্ট সহযোগী, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জাহাজও প্রেরণ করে। তাই আজকে যারা সিআইএপন্থী নাস্তিক হয়ে বাংলাদেশে ইসলামের বিরোধীতা করছে, তাদের পৃষ্ঠপোষক আমেরিকাও কিন্তু একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী, সে হিসেবে তারাও রাজাকারের জাত। আরো বলতে হয়, বর্তমানে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি (ভারতীয় জনসংঘ)ও ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো। রুশপন্থীকংগ্রেস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট দিলেও আমেরিকাপন্থী বিজেপি কিন্তু মোটেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট দেয়নি। বরং তাদের অনেক নেতা তখন বলেছিলো- “বাংলাদেশের সৃষ্টি হওয়া মানে নতুন একটা পাকিস্তানের জন্ম হওয়া”।
একটি কথা সবাইকে মানতেই হবে- ৭১ সালে যারাই রাজাকার হোক, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলো মুসলমানরাই, অপরদিকে হিন্দুরা সব পালিয়েগিয়েছিলো ভারতে। তাই মুক্তিযুদ্ধের অবদান যদি পেতেই হয় তবে তার শতভাগ প্রাপ্য মুসলমানদেরই। কিন্তু দাড়ি-টুপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাড় করিয়ে কেউ যদি সেই কৃতিত্ব ছিনতাই করতে চায় তবে সেটা জঘন্য ইতিহাস বিকৃত ছাড়া আর কিছু নয়।
----------------------------
বি: দ্র:
নয়ন-৪ আপাতত আনপাবলিশ আছে, এখন নয়ন-৫ এ লিখবো।
*নয়ন-৫ এর লিঙ্ক- (https://www.facebook.com/249163178818686)
*আমার ব্যাকআপ পেইজ-
এই পেইজগুলো ছাড়া আমার আর কোন পেইজ বা আইডি নাই।
No comments