আমেরিকা যেখানে ঢুকেছে সেখানে সুই হয়েই ঢুকেছে, কিন্তু বের হয়েছে ফাঁল হয়ে।
২০১১ সালের ৩রা ডিসেম্বর দ্য ইকোনোমিস্টে খবর আসে-
Myanmar and America : A new Great Game?
খবরে বলা হচ্ছে-
২০১১ সালের ১লা ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন মায়ানমারে আসে এবং দেশটির সামরিক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সাক্ষাৎ করেছে। এটি ছিলো ৫০ বছরের মধ্যে কোন মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তার মায়ানমার সফর।
খবরের ভেতরে আরো আছে-
পশ্চিমা কোন কোম্পানির অনুপস্থিতিতে চীন মায়ানমারের কাঠ, জেড, তেল, গ্যাস এবং অন্য অনেকের প্রচুর সম্পদ লুটপাট করেছে। মিয়ানমারের উপর চীনা ক্রমবর্ধমান দখলে সবাই বিরক্ত। সামরিক প্রেসিডেন্ট থেইন এই ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল; সে সেপ্টেম্বর মাসে ইরাওয়াদি নদীতে চীনা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের স্থগিত করেন এবং চীন থেকে বাণিজ্য ও কূটনীতি দূর করার চেষ্টা করছে।
খবরে আরো বলা হয়-
ওবামা প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, চীনের উত্থানের বিরুদ্ধে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত অবস্থানকে অগ্রাধিকার দেবে। যদি মায়ানমার আমেরিকার দিকে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারে তবে এটি একটি মহান পুরস্কার হবে।
২০১১ সালে হিলারী ক্লিনটনের আগমনের সময় দ্য ইনোমিস্টের খবরে স্পষ্ট করে বলা হয়-
এ অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে চীন ও আমেরিকার মধ্যে নতুন ‘গ্রেট গেম’ তৈরী হবে। মায়ানমার ডাকছে কে এই গ্রেট গেইমে জিতবে ? (http://econ.st/2x9wscE)
মূলতঃ ২০১০ সালে নভেম্বর সূকির মুক্তি মধ্যে মায়ানমারে আমেরিকার খেলা ‘মায়ানমার পুন:গঠন’ নাম দিয়ে শুরু হয়। আসলে এখনও অনেকে মায়ানমারকে চীনপন্থী বলে দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে ২০১০ এর নভেম্বর থেকেই তা আমেরিকার থাবায় চলে আসতে থাকে। যার মূল শাখা প্রশাখা বিস্তার করে জানান দেয় ২০১১ এর শেষে হিলারীর সফরের মাধ্যমে।
২০১১ এর ডিসেম্বরে হিলারীর সফর থেকে দ্রুত পাল্টাতে থাকে মায়ানমার।
২০১১ এর ডিসেম্বরে বার্মা শান অঞ্চলের বিদ্রোহীদের সাময়িক যুদ্ধবিরতি করে।
২০১১ এর ডিসেম্বরে দেশটি কেচিনের খ্রিস্টান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ঘোষনা করে।
২০১২ এর জানুয়ারীতে সরকার কারেন বিদ্রোহীদের সাথে অস্ত্র বিরোতি করে।
২০১২ সালের জানুয়াতে সামরিক রাষ্ট্রপতি থেইনে সেইন উগ্রবৌদ্ধ নেতা আশ্বীন উইরাথুকে জেল থেকে মুক্ত করে। এবং এই শর্ত দেয় যে- তাকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোন দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। (http://bit.ly/2hFY2HK)
২০১২ সালের এপ্রিলে নির্বাচনে সুকির দল ৪৫ সিটের মধ্যে ৪৩ সিট পেয়ে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করে।
২০১২ সালের এপ্রিলে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মায়ানমারের উপর থেকে সকল অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়।
২০১২ সালের জুনে সুকি নরওয়েতে যায় নোবেল প্রাইজ কালেক্ট করতে।
২০১২ সালের জুনে রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অস্থিরতা শুরু হয়। রোহিঙ্গা গণহত্যা শুরু হয়। অনেক রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের ঢুকতে দেয় না। (http://bit.ly/2xLHK6F)
২০১২ সালের জুলাই মাসে সামরিক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন জাতিসংঘের শরনার্থী এজেন্সি (UNHCR) কে বলে তারা যেন রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোন দেশে নিয়ে যায়, যে দেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি সংবেদনশীল। যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু সংস্থাটি এমন দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। (http://bit.ly/2g24sNt)
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামরিক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন আমেরিকা সফর করে। এবং এর কিছু পরেই সুকিও আমেরিকা যায় পুরুষ্কার আনতে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে (২৯ তারিখে) বাংলাদেশের কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটে।
২০১২ সালের অক্টোবর মাসে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী দাঙ্গা তুমুল অবস্থান নেয়।
২০১২ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা মায়ানমার সফরে আসে। স্বাধীনতার এত বছর পর এই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মায়ানমার সফরে আসলো।(http://bbc.in/1kkReWg)
পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতি সুকৌশলে তার এজেন্টদের দিয়ে এ অঞ্চলে বৌদ্ধ-মুসলিম সাম্প্রদায়িতা সৃষ্টি করেছে, যা মায়ানমার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কক্সবাজার পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। এবং আমেরিকা ও তার দালালরাই অতি কৌশলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে পুরো স্থানটি অস্থিতিশীল করার জন্য, যা বহু আগে থেকে প্ল্যান করা ছিলো। এবং সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মায়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ চীনের হস্তগত হচ্ছে সেটা বন্ধ করা এবং নিজ নিয়ন্ত্রণে সব নেয়া।
আপনাদের মনে থাকার কথা, আজ থেকে ২৫ দিন আগে স্পুটনিকের রেফারেন্স দিয়ে আমি একই কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম- এই রোহিঙ্গা গণহত্যার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়ী, এবং তার মূল উদ্দেশ্য এ অঞ্চলে চীনকে দূরে ঠেলে সম্পদের নিয়ন্ত্রণে নেয় (http://bit.ly/2fM2Sm1)। আশাকরি এই পোস্ট সবার মাথা ক্লিয়ার করবে।
তবে আমার দৃষ্টিতে পলিসিতে ফেল মেরেছে চীন। তারা আমেরিকার সাম্প্রদায়িক খেল ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালেই হাওয়া দিয়েছে। আপনারা পুরো খবরটা খেয়াল করলে দেখবেন- খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের সাথে বিদ্রোহ থামিয়ে মুসলমানদের সাথে দ্বন্দ্ব লাগানো হয়েছে।
আর এখন যেটা করা হবে হিন্দু-বৌদ্ধ এক করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগনো হবে। যার প্রসেসিং শুরু হয়েছে আরাকানে কথিত হিন্দু গণকবর দিয়ে। এক্ষেত্রে আমেরিকা কাজে লাগাবে ভারতকে। ২০১২ সালের জুন মাসে কিন্তু আমেরিকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছিলো- ভারত হচ্ছে এশিয়া প্রবেশে আমেরিকার পাপোশ বা ডোরম্যাট (http://bit.ly/2fDuAxy)। মানে ভারতের মাধ্যম দিয়েই আমেরিকা এশিয়াতে প্রবেশ করবে।
চীন পলিসিগত ভুল এখানে স্পষ্ট। আমেরিকা মায়ানমারের সরকার-সেনাবাহিনীতেও লোক ঢুকিয়েছে আবার বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা হয়েও প্রবেশ করেছে। এখন তাকে যুক্ত করছে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা। অপরদিকে চীন শুধু ব্যবসা দেখেছে, বাকিটা বুঝেনি। যদি বুঝতোই তবে কিছুতেই আমেরিকা প্ল্যানে হাওয়া লাগাতে পারতো না। চীনের এ অঞ্চলের সম্পদ এখন হাতছাড়া, এটা নিশ্চিত। তবে ভয় হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য। কারণ এ অঞ্চলে আমেরিকা যদি ঢুকে তখন বাংলাদেশকেও ভিন্ন কিছু চিন্তা করে আগাতে হবে। কারণ আমেরিকা যেখানে ঢুকেছে সেখানে সুই হয়েই ঢুকেছে, কিন্তু বের হয়েছে ফাঁল হয়ে।
------------------------------------------------------------------
--আমার ফেসবুক মূল পেইজ Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
No comments