৭ দফা গোপন চূক্তির ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ৯ মাসের যুদ্ধের কৃতিত্ব এবং তার ফসলটা নিজ ঘরে তুলতে ষড়যন্ত্র করে ভারত
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ বিজয় দিবস পালন করে,
ভারতও আজকাল ১৬ই ডিসেম্বরকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন শুরু করেছে।
উইকিপিডিয়ায় Vijay Diwas (India) নামক একটি পেইজ আছে, যেখানে দেখানো হচ্ছে:
৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধে ১৬ই ডিসেম্বর ভারত জয় লাভ করেছে এবং সেই বিজয়ের দিনটিকে তারা ভারতের ‘বিজয় দিবস” হিসেবে পালন করে। (https://en.wikipedia.org/
স্বাভাবিকভাবে কথা আসে- ভারত পাকিস্তান কোন সে যুদ্ধ ?
উইকিপিডিয়ার আরেকটি পেইজ Indo-Pakistani War of 1971 এর ৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়সীমা সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৩ দিনের যুদ্ধ । (https://en.wikipedia.org/
তারমানে ভারত যে যুদ্ধে জয়লাভের কথা বলছে- যে যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিলো ১৩ দিন ।
কিন্তু বাংলাদেশ যে যুদ্ধের কথা বলে সেটা ৯ মাসের যুদ্ধ, যার সূচনা ২৬শে মার্চ, ১৯৭১ ।
অর্থাৎ ভারত যে যুদ্ধ বিজয়ের কথা বলছে, আর বাংলাদেশ যে যুদ্ধ বিজয়ের কথা বলছে সেটার মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন বিজয়ের জন্য ৯ মাস যুদ্ধ করেছে, অন্যজন ১৩ দিন যুদ্ধ করেছে।
উইকিপিডিয়া বলছে, ভারত যে যুদ্ধের কথা বলছে, তার দুটি অংশ ছিলো-
একটি ইস্টফ্রন্ট (বাংলাদেশে যুদ্ধ), অপরটি ওয়েস্টফ্রন্ট।
ওয়েস্টফ্রন্ট এর যুদ্ধ সম্পর্কে ইতিহাস বলছে-
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাঁচটা ৯ মিনিটে পাকিস্তানের পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারতীয় ভূখণ্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। পাকিস্তানের মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ভারত পাকিস্তানের হামলার জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধাবস্থা' ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। (bn.wikipedia.org/wiki/
পুরো হিসেব কষলে, একটি বিষয় বের হয়ে আসে-
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে।
কিন্তু সেখানে পাকিস্তানকে কোন উপযুক্ত জবাব তারা দিতে পারেনি ভারত
এতে তারা পূর্ব অংশ নিজেদের দাবি করে, বাংলাদেশের ৯ মাসের যুদ্ধের কৃতিত্বটা মাত্র ১৩ দিনে ছিনতাই করতে চাইছে। ঠিক যেভাবে বাবরী মসজিদ রামের জন্মস্থান, তাজমহল হিন্দুদের মন্দির কিংবা আরবের মক্কার কাবা ঘর হিন্দুদের মালিকানায় ছিলো বলে এখন দাবি করে হিন্দুরা।
তবে শেষ মুহুর্তে ভারতীয় বাহিনীর প্রবেশ ও যুদ্ধের কর্তৃত্ব নেয়ার পুরোটার জন্য দায়ী আসলে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের ৭ দফা গোপন চূক্তি। তাজউদ্দিন আহমেদের চাপে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাত দফা গোপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দানের পরপরই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
চুক্তির উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো ছিলো-
১.বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারন করা হয় না)।
২. বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না।
৩. সম্ভব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনী সর্বার্ধিনায়ক নন, এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারত বাহিনীর অভিনায়কত্বে থাকবে। (এ কারণে জেনারেল ওসমানি আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে দর্শকের ভূমিকা পালনে রাজী হয়নি)
(তথ্য সুত্রঃ অলি আহাদ রচিত “জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫, পৃষ্ঠা-৪৩৩,৪৩৪)
মূলত: ৭ দফা গোপন চূক্তির ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ৯ মাসের যুদ্ধের কৃতিত্ব এবং তার ফসলটা নিজ ঘরে তুলতে ষড়যন্ত্র করে ভারত। এখন পর্যন্ত অবশ্য বাংলাদেশে বা ভারত সরকার কেউ এই গোপন চূক্তির কথা অফিসিয়ালী স্বীকার করেনি। ৭ দফা চুক্তির প্রথম দৃশ্যায়ন ১৬ই ডিসেম্বর হলেও, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু দেশে এসে ভারতীয় বাহিনীকে ফিরে যেতে চাপ দিলে ভারতের আশাটুকু পূরণ হয়নি।
যাই হোক,
‘ভারত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে’- এই কথাটা আসলে এখন আর বলার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে ৭ দফা গোপন চূক্তির কথা ফাঁস হওয়ার পরে। কারণ এই চূক্তি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের সাহায্যের উদ্দেশ্য ছিলো, ‘নবগঠিত দুর্বল বাংলাদেশকে তারা সহজে খেয়ে ফেলকে পারবে।’ যে বন্ধুত্বের পেছনে উদ্দেশ্য থাকে ব্যক্তিস্বার্থ ও বিশ্বাসঘাতকতা, সেই বন্ধুত্ব কখন প্রশংসিত বা উচ্চারিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
========================================
-----------------------------------------------------------------------
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
-----------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------
No comments