‘তলা বিহীন ঝুড়ি’ তত্ত্ব এবং হেনরী হিসিঞ্জারের সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘হেনরী কিসিঞ্জার’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। সারা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারে যে সমস্ত লোক পর্দার আড়াল থেকে কাজ করছে তার মধ্যে হেনরী কিসিঞ্জার অন্যতম। হেনরী কিসিঞ্জার ধর্মে ইহুদী, জার্মান বংশোদ্ভূত। বুদ্ধির কারণে তাকে আজীবন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে অবশ্য হেনরী কিসিঞ্জারের নাম বেশিবার উচ্চারিত হওয়ার কারণ, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তার বাংলাদেশকে `bottomless basket’ বা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অ্যাখ্যায়িতকরণ। আজকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগামীতা দেখিয়ে অনেকেই হয়ত বলে, তলাবিহীন ঝুড়ির সেই অপবাদ ঘুচেছে। গত ১৬ই ডিসেম্বর আরএফএল কোম্পানির থেকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি না, আমরা নতুন বাংলাদেশ' নামক একটি প্রোগ্রাম করা, যার কাজ ছিলো কিসিঞ্জারে মেইল এডরেসে মেইল পাঠানো- আমরা তলাবিহীন ঝুড়ি নই। (http://bit.ly/2BIiQnO)
উল্লেখ্য ২০১৪ সালে তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিও মোজেনা নিজ মুখে বলেছে, ‘হেনরী কিসিঞ্জারের সেই উক্তি ভুল ছিলো।’ (http://bit.ly/2BQJgGB)
কিন্তু আমার কথা হলো-
-আদৌ কি হেনরী কিসিঞ্জারের সেই উক্তি ভুল ছিলো ?
-নাকি সে ইচ্ছা করেই সেই উক্তি করেছিলো এবং নিজস্ব মিডিয়ার মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিয়েছিলো ?
আজীবন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জার্মান ইহুদী হেনরী কিসিঞ্জার কথিত ‘ভুল উক্তি’ করার মত এত কাঁচা লোক অবশ্যই না।
বাংলাদেশের যুদ্ধপরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে হেনরী কিসিঞ্জার আন্তর্জাতিকভাবে একটি পলিসি তৈরী করে যা National Security Study Memorandum 200 বা NSSM200 নামে পরিচিত। এ পলিসি অনুসারে, তারা ১৩টি রাষ্ট্রের জনসংখ্যাকে তাদের নিজ দেশের
নিরাপত্তা, নিজ নাগরিকদের আরাম-আয়েশ ও সম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখতে হুমকি বলে মনে করে। এই ১৩টি রাষ্ট্রের ১টি হচ্ছে বাংলাদেশ। (http://bit.ly/1Vx0lZx)
পাঠক !
একটু খেয়াল করুন ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা হ্রাস করা হবে বাংলাদেশের স্বার্থে নয়,
আমেরিকার স্বার্থে।
তারমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, আমেরিকার স্বার্থের তত বিরোধীতা হবে। এটাই হেনরী কিসিঞ্জারের বুদ্ধি।
কিন্তু এই তত্ত্ব কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে খাওয়াবে কিভাবে ?
এ জন্যই তখন বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছিলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে।
উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ভীতি প্রদর্শন করা- “তুমি খুব দরিদ্র, এতগুলো বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে চলবা কিভাবে ? জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের পলিসি গ্রহণ করে।”
সাইকোলাজির ভাষায় এটাকে বলে misbelief বা মিথ্যাবিশ্বাস প্রবেশ করানো।
পাঠক ! একটু খেয়াল করুন-
এখন মানুষ ২টা বাচ্চা নিয়েও টাকা-পয়সার অভাবে সারাদিন হা-হুতাশ করে দিন কাটায়। অথচ আমাদের দাদি-নানীদের আমলে তারা ১২-১৫টা বাচ্চাকে দিব্বি খাওয়াইছে।
একটু হিসেব করে দেখুন-
চালের কেজি ৭০ টাকা হলে যদি ২ বাচ্চা খায়,
তবে চালের কেজি ৩৫ টাকা হলে ৪টা বাচ্চা খেতে পারবে।
আর চালের কেজি যদি ১৭.৫ টাকা হয় তবে ৮টা বাচ্চা খেতে পারবে।
বাচ্চা কমিয়ে কৃত্তিমভাবে পন্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধি চলছে, তাহলে জনসংখ্যার উপর দায়টা আসছে কেন ??
আবার, জনসংখ্যা বলতে মিডিয়ায় শুধু ঢাকা শহরকেই দেখানো হয়।
কিন্তু ঢাকা শহরের আয়তন হচ্ছে মাত্র ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার, যেখানে থাকে ২ কোটি মানুষ ।
তাহলে ঢাকা শহরের জনসংখ্যার ঘনত্বে পুরো বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইলে থাকতে পারবে- ৮১৬ কোটি লোক।
অর্থাৎ ঢাকা শহর যে পরিমাণ জনবহুল, পুরো বাংলাদেশও সে পরিমাণ জনবহুল হলে থাকতে পারবে ৮১৬ কোটি লোক। যদিও পুরো পৃথিবীর জনসংখ্যা এখনও সাড়ে ৬শ’ কোটি।
তারমানে আপনি শুধু রাজধানী ঢাকার জনবহুলতা দেখিয়ে পুরো দেশকে ইন্ডিকেট করেন তবে সম্পূর্ণ ভুল হবে।
পাঠক এটাই আসলে হেনরী কিসিঞ্জারের সেই সাইলোজিক্যাল ওয়ারফেয়ারে। ঐ সময় জার্মান ইহুদী কিসিঞ্জার যে বুদ্ধি খেলেছিলো, বোকা বাঙালী সেই বুদ্ধির জট এখানো খুলতে পারেনি। বরং তার বানানো তত্ত্বের উপর এখনও ওকালতি করে যাচ্ছে। আসলে বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ। এখন যেটা চলছে, সেটা হলো মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বা সাইকোলাজিক্যাল ওয়ারফেয়ার। বুদ্ধি দিয়েই যদি কোটি কোটি বাংলাদেশী মুসলমানকে আতুর ঘরে হত্যা করা যায়, তবে কষ্ট করে যুদ্ধাস্ত্র খরচ করার দরকার কি, বলুন ?
========================================
-----------------------------------------------------------------------
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
-----------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------
No comments