ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে না জানা কিছু ইতিহাস
আজকে ২৬ জানুয়ারী, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টকে ভারত বিজয় দিবস হিসেবে পালন করলেও, আসলে ঐদিন কিন্তু ভারতের প্রকৃত বিজয় লাভ হয়নি। মূলত ভারতের হাতে গর্ভনরী ক্ষমতা এসেছিলো ১৯৪৮ সালে এবং ভারত প্রজাতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছিলো ২৬ জানুয়ারী, ১৯৫০। এ কারণেই ২৬ জানুয়ারীকে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ২১শে জুন পর্যন্ত ভারতের গর্ভনর জেনারেল ছিলো ব্রিটিশ লর্ড মাউন্টব্যাটেন আর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত ভারতের আনুষ্ঠানিক রাজা ছিলো ষষ্ঠ জর্জ।
এখন কথা হচ্ছে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলেও ভারত কেন তাদের গর্ভনরী ক্ষমতায় একজন ব্রিটিশ (লর্ড মাউন্টব্যাটেন)-কে আরো ১ বছর রেখে দিলো ? কেন তারা ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট দেশের ক্ষমতা বুঝে নিলো না ? এর রহস্য কি ?
এই রহস্য বা উত্তরকে যদি এক কথায় দিতে হয়, তবে বলতে হয়, ১৯৪৭ এ ক্ষমতা পেয়েও আরো ১ বছর ব্রিটিশদের অধীনে থেকে ভারত কিভাবে মুসলমানদের সাথে বেঈমানি করতে হয় সেটার শিক্ষা নিয়েছিলো এবং ব্রিটিশদের হাত দিয়ে মুসলমানদের সাথে বেঈমানির সূচনা করেছিলো।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়েছিলো ধর্মের ভিত্তিতে, মুসলমানদের জন্য হয়ছিলো পাকিস্তান আর হিন্দুদের জন্য ভারত। সে সময় ভারতবর্ষে ৫৬২টি রাজা, মহারাজা, নওয়াব , নিজাম শাসিত রাজ্য ছিলো। তাদেরকে ইচ্ছা অনুসারে ভারত-পাকিস্তানে যোগ দিতে বলা হয়েছিলো। যেহেতু কাশ্মীর ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই কাশ্মীর পাকিস্তানের সাথে যোগ দেবে এটাই ছিলো স্বাভাবিক, কাশ্মীরের জনগণ চেয়েওছিলো সেটা। কিন্তু ব্রিটিশরা আগেই কাশ্মীরের রাজা বানিয়ে রেখেছিলো হরিসিংকে। আর হরিসিং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকা কাশ্মীরকে পাকিস্তানে না দিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের কাছে সমর্পন করে দেয়। পুরো ঘটনাটা নিয়ন্ত্রণ করে লর্ড মাউন্টব্যাটেন, সে নিরপেক্ষ না থেকে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের অধীন করতে চাপ দেয়। যদি ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যেতো, তবে কাশ্মীর নির্ঘাৎ পাকিস্তানের অংশ হতো এতে কোন সন্দেহ নাই। মূলত ব্রিটিশদের ইচ্ছা ছিলো, তারা চলে গেলেও মুসলমানরা যেন শান্তিতে থাকতে না পারে, সে জন্য যে কোন উপায়ে ভারতবর্ষে একটি বিষফোড়া গাড়তে চেয়েছিলো তারা, কাশ্মীর হচ্ছে ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য সেই বিষফোড়ার নাম।
তবে কাশ্মীরের মুসলমানদের মোয়া দেখিয়ে ভারতের অধীন করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিলো জাতিসংঘ তথা ইহুদীসংঘ। ১৯৪৭-৪৮ এ ভারত পাকিস্তান-যু্দ্ধ শুরু হলে ১৯৪৮ সালে ফের সমঝোতার নাম করে জাতিসংঘ মুসলিমদের বিরুদ্ধে গিয়ে হিন্দুদের পক্ষে কাজ করে। যুদ্ধবিবরিত নাম দিয়ে ফের কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভূক্তি হতে রূপরেখা তৈরী করে দেয়।
১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮-এ একই বছর জাতিসংঘ মুসলমানদের সাথে দুটো বেঈমানি করেছিলো। মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিন দখল করে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা, আর অন্যটি হচ্ছে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া।
উপরের আলোচনা থেকে শিক্ষনীয় হচ্ছে, রসুনের সব গোড়া যেমন এক, ঠিক তেমনি সকল অমুসলিমও (হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ) মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক। এমনকি অমুসলিমদের দ্বারা সূচিত সংগঠন (জাতিসংঘ) নিরপেক্ষতার ভাব নিয়ে থাকলেও তা সব সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করবে, এটাও চিরন্তন সত্য।
তবে সমস্যা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য, তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। তারা শত্রুর দ্বারা বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও শত্রুর শত্রুতা ভুলে যায়, ফের তাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে এবং এ কারণেই বর্তমানে মুসলমান জাতির এ করুণ অবস্থা।
সবাইকে ধন্যবাদ।
No comments