১৪ই ফেব্রুয়ারী এবং “V Day"
এই দিনটি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দিবস হিসেবে পালন করা
হয়। সহিংসতা বলতে- নারী ধর্ষণ, নারী পাচার
ও মেয়ে শিশুদের উপর পারিবারিক যৌন নির্যাতন বন্ধ এ দিবসটি পালনের শিক্ষা। সাধারণ
মানুষ তো অবশ্যই, বিশেষ করে
নারীবাদী বা ফেমিনিস্টদের জন্য এটা একটা বিশেষ দিন। এ দিনটিকে উপলক্ষ করে তারা
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য প্রচারণা চালায়। ‘ভি ডে’ দিবসটির সূচনা হয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাট্যকার ও
বিখ্যাত নারীবাদী কর্মী ইভ এনসলার এর নাটক The Vagina Monologues এর উপর
ভিত্তি করে। ১৯৯৮ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিবস
পালনের কার্যক্রম শুরু করে তারা। (https://en.wikipedia.org/wiki/V-Day_(movement))
উল্লেখ্য ১৪ই ফেব্রুয়ারী আরো একটি দিবস পালন হয়। তার নাম
ভ্যালেন্টাইন ডে। ভ্যালেন্টাইন ডে’র মূল
কার্যক্রম কিন্তু ‘ভি ডে’র কার্যক্রমের ঠিক বিপরীত। কারণ ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ দিবসটি
ইতিমধ্যে অনেক দেশে ‘নারী ধর্ষণ
দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বা পাচ্ছে। যেমন-
-দক্ষিণপূর্ব
এশিয়ার দেশ ক্যাম্বোডিয়াতে ভ্যালেন্টাইন ডে’কে ধর্ষণের
উপলক্ষ দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ পুরুষরা এ দিনকে অজুহাত করে নারীদের
ব্যাপক হারে ধর্ষণ করে থাকে। (https://goo.gl/WDgwjd, https://goo.gl/6lOqOy)
-আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে ধর্ষণ
ঠেকাতে নারীদের প্রতিরোধ করার ট্রেনিং দেয় পুলিশ। (http://goo.gl/A42HGj)
আমেরিকায় পুরুষরা পর্যন্ত এ দিনে নারীদের দ্বারা ধর্ষনের
শিকার হয়। (http://goo.gl/6iZPPH)
ভারতে তো ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষ্যে ধর্ষণের মাত্রা
মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ভারতীয় সংবাদ মা্ধ্যমে গত বছর ১৫ই ফেব্রুয়ারী হেডিং ছিলো-
“Valentine's Day date rape shocks India, shames Delhi” (http://goo.gl/aHN4Gz)
“Valentine's Day date rape shocks India, shames Delhi” (http://goo.gl/aHN4Gz)
বাধ্য হয়ে সচেতন ভারতীয়রা বলে, “ভ্যালেন্টাইন ডে নিষিদ্ধ করলেই ভারতে ধর্ষণ কমানো
সম্ভব।" (http://goo.gl/NerYyo)
উপরের আলোচনায় একটি জিনিস প্রতিয়মান হয়, ১৪ই ফেব্রুয়ারী দুটি দিবস আছে-
১) ‘ভি’ ডে
২) ভ্যালেন্টাইন’ ডে
১) ‘ভি’ ডে
২) ভ্যালেন্টাইন’ ডে
অথচ দুটি দিবসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিরোধী। ভ্যালেন্টাইন
ডে দ্বারা নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে ভি’ ডেতে নারীর প্রতি সহিংসতা হ্রাস করার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা
হয়। তা্ই আমার দৃষ্টিতে ভ্যালেন্টাইন ডে’ দিবসটি
বাতিল করে ভি’ ডে দিবসটি
পালন করা অধিক যুক্তিযুক্ত।
তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, উপরের আলোচনা দ্বারা্ এটাও প্রতিয়মান হয়- বাংলাদেশের কথিত
মুত্রমণা গোষ্ঠী একেবারেই বেইজলেস ও মূর্খ। তারা আসলে নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কেই
জানে না। যেমন, একটি
উদাহরণ দেই-
হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ নিজেকে ফেমিনিস্ট বলে দাবি
করে, গত বইমেলায় তার বইও ছিলো ফেমিনিজমের উপর, নাম- ‘সতিত্ব বনাম
বহুগামিতা’। অথচ এ বেকুব ‘ভি ডে’ পালন বাদ দিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে’র পক্ষে প্রচারে নেমেছে, এমনকি
প্রকাশে চুমু খাওয়ার জন্য ইভেন্ট পর্যন্তু খুলেছে। তার তো উচিত ছিলো ফেমিনিস্টদের
দিবস ভি’ডে কে প্রমোট করা, সেটা না করে
তার প্রতিদ্বন্দ্বী দিবস ‘ভ্যালেন্টাইন
ডে’ বা পূজিবাদীদের দিবসকে সে প্রমোট করে যাচ্ছে। তসলিমা
নাসরিনও নিজেকে ফেমিনিস্ট দাবি করে একই কাজ করে যাচ্ছে
শুধু অনন্য আযাদ বা তসলিমা কেন, বাংলাদেশের যে গো-মূর্খগুলো নিজেদের ফেমিনিস্ট বলে দাবি, করে তারা সারা দিন আছে ফালতু সব বিষয় নিয়ে। যেমন- ‘মা যেন তার ছেলেকে তার প্রিয়ডের কথা বলে’, কিংবা ‘মেনোপজ হয়ে
গেলেই সেক্স লাইফ শেষ হয় না’ কিংবা ‘আমি পোষাক কম পড়বো, তুমি তাকাও
কেনো ?’ এ্ই টাইপের ফালতু কার্যক্রম নিয়ে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ডে’তে যে নারী নির্যাতনের মাত্রা বহুগুন বেড়ে যাচ্ছে কিংবা এ
দিবসটি যে ফেমিনিস্টদের ‘ভি’ডের সাথে সাংঘর্ষিক এটা নিয়ে কেউ এ পর্যন্ত কিছু বলেনি।
আমার মনে হয় বাংলাদেশের মূত্রমনাদের আগে নিজের বাবা’র সঠিক পরিচয়টা মায়ের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। হয়ত তারা নিজেদের
বাবা’র পরিচয়টা ঠিক মত জানে না, একারণে ঠিক
কোন দিকে তাদের কার্যক্রম নিয়ে যাবে, সেটাই বুঝে
উঠতে পারে না।
সবাইকে ধন্যবাদ।

No comments