Header Ads

ad728
  • Breaking News

    পান্তাভাত কি বাঙালী জাতির প্রতিনিধিত্ব করে ?


    ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট তার সহযোগীকে সাথে করে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এ দেখে অনেকের বুকই কয়েক হাত ফুলে গিয়েছে, কিন্তু সত্যিই বলতে কি পান্তাভাত এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করে? বরং এ দ্বারা বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে এদেশের মানুষ জাতিগতভাবে গরীব। এই ছবিতে আসলে বিদ্রুপই প্রকাশ পাচ্ছে।
    খাদ্য একটি জাতির সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা বিচারের অন্যতম অঙ্গ। যে জাতির খাদ্যাভ্যাস যতো সমৃদ্ধ, সে জাতি ততো সভ্য। এদেশের সমতলের মানুষ মাংস রান্না করে খায়, কিন্তু পাহাড়ি উপজাতিরা মাংস ঝলসে খায়। পোকামাকড় রান্না করে খায়। কারণ সমতলের মানুষের তুলনায় তারা সভ্যতার বিচারে অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে।
    এ কারণে সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে প্রত্যেকটি জাতিই তার সবচেয়ে সমৃদ্ধ খাদ্যটিকে তুলে ধরে। যেমন বার্নিকাটের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ তাদের সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে আস্ত টার্কি মুরগির রোস্টকে, যেটা মার্কিনিরা তাদের ‘থ্যাংকসগিভিং ডে’ উপলক্ষে রান্না করে। কিন্তু আমাদের দেশের বেকুবগুলোর মাথায় এটা ঢোকে না, তাই তারা পান্তাভাতের মতো একটি গরীবের খাবারকে স্বজাতির আইকন বানিয়েছে। অথচ বাঙালি মুসলমানের রয়েছে এর চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ রান্নার সংস্কৃতি। বাঙালি মুসলমানের রান্নার সংস্কৃতি যে কতো উপরে, এর উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা যায় যে হিন্দু মহিলারা পোলাও রান্না করতে জানে না। এমনকি হিন্দুদের বিয়ের উৎসবেও আগে পোলাও দেয়া হতো না্। হিন্দুদের মধ্যে ‘পাচক’ নামে একধরণের রাঁধুনি গোষ্ঠী রয়েছে, তারা ভাত রান্না করে তার উপর ঘি ঢেলে দিতো। বেগুনভাজি ও মাছ রান্না করতো। এটাই ছিলো হিন্দুদের উৎসবের খাবারের দৌড়।
    বিপরীতে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে পোলাও, কোরমা, কাবাব, বিরিয়ানী সহ আরো অনেক খাবার। এগুলো তারা পেয়েছে মুঘলদের উত্তরাধিকার সূত্রে, কারণ মুঘলদের রাজধানী ছিলো ঢাকা। বর্তমান পুরান ঢাকায় যে কাবাব ও বিরিয়ানীর চল দেখা যায়, তার সূত্রপাত হয়েছে মুঘল আমল থেকে। যে কারণে বাঙালি মুসলমানের বিয়ে কিংবা উৎসবের খাবারে শুরু থেকেই পোলাও কোরমার চল রয়েছে। এই পোলাও কোরমা যে স্পেসিফিক্যালি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে, তার প্রমাণ বহু জায়গায় পাওয়া যায়। যেমন কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু ফ্যামিলিতে, যে কারণে পোলাও-কোরমা খাওয়ার সুযোগ তার হতো না। একদিন খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন নামক আরেকজন কবির বাসায় দাওয়াতে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম পোলাও খেলেন। খেয়ে বললেন, অনেকদিন পর মুসলমানী খাবার খেয়ে খুব শান্তি পেলাম। ঘটনাটি উল্লেখিত হয়েছে খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীনের রচিত ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ বইতে।
    অর্থাৎ এদেশের মানুষ কিন্তু পারে, পোলাও-কোরমা-কাবাবের মতো অভিজাত খাবারগুলোকে স্বজাতির প্রতিনিধি বানিয়ে দেশের সম্মানকে উপরে তুলতে। কিন্তু তাদের সে দিকে নজর নেই, কারণ পোলাও কোরমাকে রিপ্রেজেন্ট করলে এদেশের মানুষ বিশ্বে পরিচিত হবে মুসলমান হিসেবে। কিন্তু এদেশের মুসলমানরা তো আর নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচয় দিতে চায় না। তারা হিন্দুয়ানী কালচারকে আঁকড়ে ধরে, পান্তা-ভর্তাকে আইকন বানিয়ে বিশ্বের বুকে পরিচিত হতে চায়, তাই শেষমেষ পায় ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’র খেতাব।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728