ইসরাইলি এজেন্টদের স্বরূপ
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী যে ইসরাইল-ইন্ডিয়া সম্পর্কিত একটি মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন সেটা তিনি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। তবে এও বলেছেন- ঐ মিটিং-এ সরকার বিরোধী কোন আলাপ হয়নি। এ সম্পর্কে আমাদের সময়.কম এ ১১ই মে প্রকাশিত খবরে আসলাম চৌধুরী বলেন-
“আমি ব্যবসায়িক কাজে ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানে শিপন বাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় (যদিও পরে বলেছেন ফেসবুকে পরিচয়)। তিনি আমাকে একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। যেখানে তেল আবিব-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনারে হচ্ছিল। ওই বৈঠকের পর একটি গ্রুপ ছবিতে আমি যোগ দেই। ওই ছবি দিয়ে যে সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে তা ভিত্তিহীনভাবে আমাকে সরকার উৎখাতের ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।’ (http://archive.is/Drf4s)
মেনে নিলাম- আসলাম চৌধুরী সরকার উৎখাতের সাথে সম্পর্কিত কোন কাজে জড়িত ছিলেন না, কিন্তু তিনি কি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত হয়ে গেলেন না ? ভারত-ইসরাইলের সম্পর্ক নিয়ে অনুষ্ঠানে তিনি কেনো গেলেন ? সেখানে উনার ব্যবসায়ীক স্বার্থ কি ? আর শিপন কুমার বসুর সাথে কি সম্পর্ক আসলাম চৌধুরীর, যার কারণে আসলাম চৌধুরী বাংলাদেশী ও মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ভারত-ইসরাইলের অনুষ্ঠানে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরন করা হয় ?
মোসাদ এজেন্ট শিপন কুমার বসুর ফেসবুক একাউন্টে আসলাম চৌধুরীর ছবি দেখতে পারেন: http://archive.is/WMvoH
এখানে একটি কথা লজ্জাজনক হলেও বলতে হয়, কিছূক্ষণ আগে আমার এক স্ট্যাটাসে একজন কমেন্ট করেছেন- “ (এ সব লেখা ) বাদ দেন, আপাতত চাচ্ছি ক্ষমতার পালাবদল, যার হাতেই যাক অন্তত হাসিনার হাত থেকে তো বাঁচবো?”
এখন কারো যদি ইচ্ছা হয়- ইহুদীরা আসুক, তবুও আওয়ামী সরকার যাক, তবে আমার আর পোস্ট লেখার দরকার নাই। কিন্তু আপনারা যদি দল-মত নির্বিশেষে দেশ নিয়ে চিন্তা করেন, তবে আমার লেখালেখি করার দরকার আছে বলে মনে করি।
আমি একটা জিনিস দেখি-
বিএনপির কোন নেতা দোষ করলে আওয়ামী লীগ দোষ দেয় পুরো বিএনপিকে, আর আওয়ামী লীগের কোন নেতা দোষ করলে বিএনপি দোষ পুরো আওয়ামী লীগকে, চলে দু’দলের মধ্যে কামড়াকামড়ি, মাঝখান দিয়ে পুটু মারা খায় বাংলাদেশ। দেশের কোন নাগরিক যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকে, তবে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত, সে যেই দলেরই হোক না কেন। এক্ষেত্রে আসলাম চৌধুরী যদি অন্যায় করে থাকেন, তবে তার বিচার হওয়া উচিত, তবে সেটার জন্য পুরো বিএনপিকে দোষ দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য ঝাপিযে পড়াকে আমি সমর্থন করি না।
আসলাম চৌধুরীকে একটি কথা বলতে চাই-
তিনি যেভাবে ইহুদী-ভারতীয় অনুষ্ঠানে গেছে এবং ফটোসেশন করেছে তা সত্যিই নিলর্জ্জের মত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ও ইসরাইলের সম্পর্ক কিন্তু অন্য দেশের মত নয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুই শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষে সাহায্য পাঠাননি, জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক বাংলাদেশী বৈরুতে ইরাইলের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র রাষ্ট্র যার পাসপোর্টে লেখা আছে- Bangladeshi passport, is valid for all countries except Israel.
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর শুরুতেই ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নিজ থেকে অগ্রগামী হয়, কিন্তু বাংলাদেশ সেই বিপদের মুহুর্তেই ইসরাইলের স্বীকৃতি ইসরাইলের মুখের উপর উল্টো ছুড়ে দেয়, গ্রহণ করে না ইসরাইলের স্বীকৃতি।
এই যখন হয় ইসরাইল-বাংলাদেশের সম্পর্ক,
সে অবস্থায় আসলাম চৌধুরীর মত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ধরনের একটি অনু্ষ্ঠানে যায় কিভাবে ? ফটোসেশন করে কিভাবে ? লিকুদ পার্টির ইহুদী নেতা মেন্দি এন সাফাদি ও শিপন কুমার বসু নামক নিকৃষ্টের সাথে খাওয়ার ছবি, গলায় মালা দিয়ে তুলে কিভাবে ? এটা আমার মাথায় আসে না।
যাই হোক,
১১-১২ই মে স্বাধীনতা দিবস পালন করছে ইসরাইল। আজ থেকে ৬৮ বছর আগে ১৯৪৮ সালে এ দিনে মুসলমানদের ভূমি জোরজবর দখল করে ইহুদীবাদী ইসরাইল। এ উপলক্ষে খুলনার হিন্দু শিপন কুমার বসু ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। আমি স্ট্যাটাসটি অনুবাদ করে আপনাদের জন্য দিলাম-
“আমার প্রিয় ইহুদী ভাই ও বোনেরা, তোমাদের ইসরায়েলের ৬৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমি শিপন কুমার বসু, একজন বাংলাদেশী সমাজকর্মী যে বাংলাদেশী হিন্দু সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করে, তোমাদের সমস্ত সৈনিককে স্যালুট জানাই যারা ইসরায়েলের জন্য লড়েছে এবং নিজেকে উৎসর্গ করেছে। আমি সেসব ইহুদী মাকে শ্রদ্ধা জানাই যাদের সন্তানেরা ইসরায়েলের জন্য জীবন দিয়েছে। আমি ইসরাইলকে দেখি বিশ্বের বুকে শান্তির প্রতীক হিসেবে। একমাত্র ইসরাইলই পারে…সমস্ত সন্ত্রাসবাদকে এবং ধ্বংসাত্মক কাজকে বন্ধ করতে এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে। আমরা ইসরাইলের সমর্থক হিন্দুরা আমাদের ইহুদী ভাই ও বোনদের জন্য গর্বিত এবং তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। ইসরাইল হচ্ছে আমাদের আদর্শ রাষ্ট্র এবং আমাদের ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। আমরা কখনোই ভুলবো না যে, তোমরা ১৯৭১ এর যুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদেরকে একটি প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বর্তমান সরকার হিন্দুদেরকে নির্যাতন করছে এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করছে। এটি খুবই হৃদয়বিদারক যে, আমি যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি, তখন সরকার মিডিয়াতে ঘোষণা দেয় যে আমি একজন ইসরাইলি এজেন্ট। আমি ইসরাইলি এজেন্ট নই, আমি মানবতার এজেন্ট এবং আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন এজেন্ট। আমরা তোমাদের সকলকে ভালোবাসি। শালোম।
(সূত্র:http://archive.is/4fnKh)
No comments