পিনকীয়- ৩: নয়নের বিরুদ্ধচারণ করে পিনাকী আসলে কি চাইছে ??
বর্তমান বিশ্বে মিডিয়া একটা বড় বিষয়, যার মিডিয়া আছে তার যেন মুখ আছে, আর যার মিডিয়া নেই তার যেন মুখ নেই, সে যেন একটা বোবা প্রাণী।
অমুসলিমরা সব সময় এটাই চেয়েছে যে, মুসলমানদের যেন কোন মুখ না থাকে। মুসলমানদের যতই নিপীড়ন করা হোক, তারা যেন কষ্টে ডুকরে মরে, কিন্তু মুখ ফুটে যেন একটা টু শব্দও বের না হয়। সমস্ত মুখ, মানে মিডিয়া থাকবে শুধু অমুসলিমদের হাতে, মুসলিমদের হাতে নয়।
এজন্য দেখবেন, সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র তা নিয়ে কিন্তু কোন মিডিয়া কিছু বলছে না, উল্টো মুসলমানদের যেন চেপে পিষ্ট করে ফেলা হয় সেটাই এখন সমস্ত মিডিয়ার প্রকাশ্য উদ্দেশ্য। তবে যদি কোন মিডিয়া নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে কিছু বলতেই যায়, তবে তার টুটি চেপে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই বর্তমান সময়ে স্যোসাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার ভেতরে জমে থাকা কথাগুলো কিছুটা হলেও বলতে পারছেন। কিন্তু এতেই অমুসলিমদের বহুদিনের পাওয়ার, মানে মিডিয়ার পাওয়ার কিছুটা হলেও খর্ব হতে চলেছে।
বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক পেইজ আছে, কিন্তু কোন পেইজ তো এতবার বন্ধ করা হয় না। কিন্তু কেন নয়ন চ্যাটার্জি (https://www.facebook.com/realnoyon4/) পেইজ বার বার বন্ধ করা হয় ? এই পেইজ ঐ বিশেষ গোষ্ঠীটির কি ক্ষতি করেছে?
হ্যা ধরতে পেরেছেন, এই একটি পেইজ ঐ বিশেষ গোষ্ঠীটির অনেক স্বার্থে আঘাত হেনেছে। তাদের বহুদিনের জমিয়ে রাখা বহু প্ল্যান ফাঁস করে দিয়েছে। এই পেইজটি প্রকাশ করেছে পাঠ্যপুস্তকে যা শিখানো হচ্ছে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক, এই পেইজটি প্রকাশ করেছিলো রাষ্ট্রধর্ম পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে, আপনারা সতর্ক হোন। এই পেইজটি প্রকাশ করেছিলো নারায়নগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তির নামে একাত্তর টিভি যা প্রকাশ করছে তা ভুয়া। এই নয়ন প্রকাশ করেছিলো কোরবানীর স্পট ফিক্সড করে মুসলমানদের কোরবানীকে সীমাবন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এই নয়নই ফাস করেছিলো বুড়িগঙ্গার তীরে ২২টি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন, এই নয়নই প্রকাশ করেছিলো ক্লাস-৬ এর ইসলাম শিক্ষা বইয়ের ৫৮টা ভুল আছে।এই নয়নই প্রকাশ করেছে বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাকে আঘাত করে অশ্লীল সব বই।
নয়ন ছাড়া অনেক ফেসবুক আইডি তো আছে, আছে অনেক নিউজ সাইট, আছে অনেক অনেক মিডিয়া। কিন্তু সবাই এসব প্রকাশ করছে না, করছে শুধু নয়ন। আর এতেই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে তাদের। যদি নয়নের কিবোর্ড বন্ধ করে দেয়া যায়, তবে অনলাইনে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে কথা বলার মত শেষ মুখটাও বন্ধ করে দেয়া যাবে।
পিনাকী একটা কথা বলেছে- সে নাকি লেখালেখি করে নয়ন চ্যাটার্জিকে ই-রিলেভেন্ট বা অপ্রাসঙ্গিক করে দিবে। অর্থাৎ নয়ন নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে যে কথাটা বলছে সেটাকে ঘুড়িয়ে পেচিয়ে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ফুলঝুড়ি ছড়াচ্ছে- ‘নয়ন নাকি হিন্দুবিদ্বেষ ছড়ায়’। আমি এ ধরনের দাবিকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে যদি হিন্দুরা ষড়যন্ত্র করে, আর সেই ষড়যন্ত্রকে ফাঁস করাকে যদি কেউ হিন্দুবিদ্বেষ বলে দাবি করে, তবে তা কখনই সত্য নয়। বরং যে এ দাবি করছে তার উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এটা অস্বীকার করার কোন্ উপায় নেই, ভারতে মুসলানদের উপর অনেক যুলুম হচ্ছে। সম্প্রতি বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী সরকারের অতি ভারত প্রীতির কারণে বাংলাদেশেও যে মুসলমানরা নিপীড়িত হতে শুরু করেছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারেন ? এই বিষয়টি যদি আমি ফাস করি, তবে কি আমি হিন্দুবিদ্বেষী অথবা বিজেপিপন্থী হয়ে গেলাম ?? আমি নিজেও তো বিজেপীর দাঙ্গবাজি নিয়ে অনেক লেখা লিখেছি।
কিছুদিন আগে পিনাকী এক নোটে বলেছিলো- ফেসবুকের আঞ্চলিক অফিস নাকি ভারতে। নয়ন চ্যাটার্জি যদি বিজেপির এজেন্ডাই সার্ভ করতো তবে নিশ্চয়ই মোদি সরকার ক্ষমতায় থাকতে নয়নের আইডি বার বার নষ্ট হওয়ার কথা ছিলো না।
পিনকী বক্তব্য হচ্ছে- “আমি অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, নয়ন হিন্দুবিদ্বেষের কথা বলে, আপনারা কি আমার সাথে থাকবেন না নয়নের সাথে” এ উদ্ভট অপশন বলে আসলে সে কৌশলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে এবং অনলাইনে নিপীড়িত মুসলমানদের শেষ ভয়েসটাও বন্ধ করে দিতে চাইছে, এই বিষয়টা অবশ্যই মুসলমানদের বুঝা উচিত।
পাশাপাশি, পিনাকী হচ্ছে অনলাইনে অন্যতম শীর্ষ পল্টিবাজ, যে মাত্র ১ ঘন্টার ব্যবধানে শামসুল হকের পক্ষেও লেখে, আবার বিরুদ্ধেও লেখে। জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্য শাহবাগে-একাত্তরটিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়, আবার সেই জামাতকে কাছে টানতে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেও স্ট্যাটাস দেয়। আসিফ মহিউদ্দিনের পক্ষেও স্ট্যাটাস দেয়, আবার ভাগে টান পড়লে আসিফ সাথে গলা বাড়িয়ে ঝগড়াও করে।
আমি বলবো- এই কুখ্যাত পল্টিবাজের কথায় ভুলে, মুসলমানরা যদি মুখ বন্ধ করে আরো বোবা হতে চায় তবে আমার সমস্যা নেই। পাঠকই সিদ্ধান্ত নিক, তারা কার সাথে থাকবে ? নয়নের সাথে, নাকি পিনাকীর সাথে?
No comments