Header Ads

ad728
  • Breaking News

    এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম পরিবর্তন করতে লিখছে বাংলা ট্রিবিউন




    উদ্দেশ্য ভালো নয়, উদ্দেশ্য হিন্দুদের গোপন অভিলাষ পূরণ। এজন্য উগ্রহিন্দুত্ববাদীরাই সে লেখা শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে। (http://bit.ly/2e3nYrN) অনেকে হয়ত জানে না, হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী নামটি হিন্দুদের কাছে একটি জঘন্য নাম। এই নাম শুনলেই গায়ে আগুন ধরে যায় হিন্দুদের। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গত বছর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ চায়। ঐ সভায় উগ্রহিন্দুত্ববাদী শ্যামল চক্রবর্তী রমনা পার্ককে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামকরণ করায় ক্ষোভ ঝাড়ে। এবং বলে- “কলকাতা দাঙ্গার মহাঅধিনায়ক সোহরওয়ার্দীর নামে রমনা পার্কের নামকরণ করা হয়েছে।” (http://bit.ly/2dpulrt)
    স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, ১৯৪৬ সালে কলকাতা দাঙ্গার সময় কি হয়েছিলো ?? এবং সেই দাঙ্গার সময় বাংলার তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দীর ভূমিকা কি ছিলো যে হিন্দু তার উপর এত ক্ষ্যাপা ? আসুন সে ইতিহাস জেনে নেই।
    ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ৫ হাজার জন নিহত হয় এবং আহত হয় আরো ১৫ হাজার। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল মুসলমান। এই দাঙ্গা ১৬ই আগস্ট শুরু হয়ে ২০ শে আগস্ট পর্যন্ত পুরোদমে পাঁচদিন ধরে চলেছিল। এটি ছিল কলকাতার হিন্দুদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে আয়োজিত একটি সহিংস ঘটনা। কলকাতার এই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সম্পর্কিত সব গবেষণাই প্রাথমিকভাবে হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসকে দোষী সাব্যস্ত করে। অন্যদিকে দাঙ্গার জন্য মুসলিম লীগ নেতৃত্বের একটি অংশকে দায়ী করে হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেস।
    দাঙ্গার আলামত পর্যালোচনা করে জয়া চ্যাটার্জি তার বইয়ে লিখেছে, ‘আশ্চর্য্যজনকভাবে দাঙ্গার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া বিশাল সংখ্যক হিন্দুরা ছিল অভিজাত শ্রেণীর’ ……বাঙ্গালী হিন্দু ছাত্র এবং অন্যান্য পেশাজীবী, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বেশি তৎপর ছিল…… একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল শিক্ষিত হিন্দু তরুণরা, যাদের হাতে নিহত হয়েছিলেন প্রখ্যাত চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. জামাল মোহাম্মদ।’ [জয়া চ্যাটার্জি, বেঙ্গল ডিভাইডেড, ২৩৯]।
    হিন্দুদের পক্ষে আরও জড়িত ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত আইএনএ সৈন্য ও মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা। চ্যাটার্জির গবেষণা থেকে দেখা যায়, ‘এটি ছিল হিন্দু ছাত্র, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সাবেক কর্মচারি ও কর্মকর্তা, কংগ্রেস ও মহাসভার সদস্য, দোকানদার, এবং আশে পাশের মাস্তান ছেলেদের একটি জোট, যারা ১৯৪৬ সালে কলকাতার রাস্তায় হিন্দু দাঙ্গাকারীদের নিষ্ঠুর ও রক্তাক্ত বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল’ ফলশ্রুতিতে, “দাঙ্গায় হিন্দুদের চেয়ে মুসলিমদের নিহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, এবং প্যাটেল তাঁর স্বভাবসুলভ, শীতল ও ভীতিকর কণ্ঠে এই পাশবিক ঘটনাকে ‘হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্ব’ বলে অভিহিত করেছিলেন” [জয়া চ্যাটার্জি, বেঙ্গল ডিভাইডেড, , পৃ. ২৩৩]।
    দাঙ্গার সময় মুসলিমদের উপর হিন্দুদের নৃশংসতা এতোই পাশবিক ও বর্বর ছিল যে, অনেক ইতিবাচক চিন্তাসম্পন্ন হিন্দু মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে মনসুর আহমদ আলীগড় কোর্টে একজন তরুণ ব্রাহ্মণ মুনসেফের কথা উল্লেখ করেন। হিন্দু ধর্মান্ধদের নির্দয় তান্ডবলীলা দেখার পর সে তরুণ ব্রাহ্মণকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। সেই তরুণ দেখেছিল, ‘কিভাবে উচ্চ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হিন্দুরা, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং সিনিয়র আইনজীবীরা তরবারি ও রামদা দিয়ে তাদের আশেপাশের বস্তিবাসী মুসলিম পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের হত্যা করেছিল’ [আবুল মনসুর আহমেদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পৃ. ১৯৬]।
    দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর, কলকাতা পুলিশ, যেখানে হিন্দু কর্মকর্তা ও কনস্টেবলের সংখ্যা ছিল বেশি, তারা উত্তপ্ত অবস্থা দমন করতে বেশি উদ্যম দেখায় নি। এর পরিবর্তে তাদের অনেকের ব্যাপারে হিন্দু সহ-ধর্মাবলম্বীদের সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে । উল্লেখযোগ্য যে, সে সময়ের ৬০ লক্ষ মানুষের কলকাতা শহরে মাত্র ১,২০০ সদস্যের একটি পুলিশ বাহিনী ছিল যাদের মধ্যে মাত্র ৬৩ জন ছিল মুসলমান । এছাড়া অফিসারদের মধ্যে একজন ডেপুটি কমিশনার ও একজন অফিসার-ইন-চার্জ ছাড়া বাকি সব ছিল হিন্দু [মোহাম্মদ এইচআর তালুকদার (ইডি), হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও কর্মের স্মৃতিকথা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড]
    পুলিশের ইংরেজ মহাপরিদর্শক মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীকে বলেন, চরমপন্থী হিন্দুদের দ্বারা সংগঠিত দাঙ্গার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনিও জানতেন না কারন পুলিশের সবগোয়েন্দা শাখা শুধু হিন্দু সদস্যদের দ্বারা গঠিত এবং তারা সরকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে [কামরুদ্দিন আহমদ, পৃ ৭১]ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ ২৫]।
    এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সোহরাওয়ার্দী পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সারাক্ষন বসে সশস্ত্র কনস্টেবল ভর্তি ট্রাক প্রেরণ করেন কিন্তু তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে নাই। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে, হিন্দু নেতাদের প্রতিবাদের মুখে ও ব্রিটিশ গভর্নর কার্য্যালয়ের প্রাথমিক অসম্মতি সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনীতে ভারসাম্য তৈরির লক্ষ্যে তিনি ১,২০০ প্রশিক্ষিত মুসলিম পাঞ্জাবি সিপাহি নিয়োগ করেন যা অবশেষে কলকাতা দাঙ্গা দমন করে।
    হিন্দুদেরকে বিনাবাধায় মুসলমানদের গলা কাটতে না দেয়া এবং মুসলিম সিপাহি পাঠিয়ে হিন্দু দাঙ্গাবাজদের ঠাণ্ডা করার কারণেই সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে উগ্রহিন্দু সমাজ, যেই ক্ষোভ ৭০ বছর পরেও তারা জিয়িয়ে রেখেছে। এবং সেই জমানো ক্ষোভ থেকেই তারা পরির্তন করতে চায় সোহরাওয়ার্দী পার্কের নাম। বাংলা ট্রিবিউনের এই লেখা সেই ক্ষোভেরই কৌশলগত বহিঃপ্রকাশ। উগ্র হিন্দু সমাজের মনবাসনা পূর্ণ করে সোহরাওয়ার্দী পার্কের নাম পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই মেনে নেয়া যায় না।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728