Header Ads

ad728
  • Breaking News

    জেনারেশন গ্যাপ ও মুসলিম সমাজ

    বর্তমানে মিডিয়াতে জেনারেশন গ্যাপ বলতে শুধু বাবা-মা’র সাথে সন্তানদের দূরত্ব বুঝায়। মিডিয়াতে দেখায়- নতুন প্রজন্ম পুরাতন প্রজন্ম পরষ্পরের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারাটাই জেনারেশন গ্যাপ।
    তবে ‘জেনারেশন গ্যাপ’ এর এই তত্ত্ব আরো বিস্তর অর্থে ব্যবহার করতে আমাদের মিডিয়াকে কখন দেখা যায়নি। আমার এ পোস্ট সেই আসল জেনারেশন গ্যাপ সম্পর্কেই।

    জেনারেশন গ্যাপ বলতে আসলে বোঝায়- এক প্রজন্মের মূল্যবোধ যখন আরেক প্রজন্মের মধ্যে পাস না হয়।

    একটি প্রজন্মের মূল্যবোধ এমনি এমনি তৈরী হয় না। বহুদিন ধরে বহু কষ্ট করে সেই মূল্যবোধ মানুষ সঞ্চয় করে এবং তার পরবর্তীতে প্রজন্মকে সেটা শিখিয়ে দেয়। নতুন প্রজন্ম সেটা ক্যাচ করে তাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায়।

    উদাহরণ দিলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে। ধরুন- আমরা যখন ছোট ছিলাম- তখন মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এত কিছু ছিলো না। আমরা একটু বড় হওয়ার পর মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট পেলাম। প্রথম অবস্থায় মোবাইল টিপতে ভয় পেতাম, মোবাইল সেট নষ্ট হয়ে যায় কি না ? যে একটা মেইল আইডি খুলতে পারতো সে বিরাট কিছু হতো। দেখা গেলো পুরো বিষয়টা ধিরে ধিরে আমাদের আয়ত্ত্বে আসলো। কিন্তু আমাদের যারা সন্তান, দুই বছর বয়সে এন্ড্রয়েড সেট টিপছে। ইউটিউব ভিডিও দেখছে, ওয়াইফাই ইউজ করছে যেন তার কাছে সব পানি ভাত, যা বুড়ো বয়সেও আমাদের কল্পনাতিত ছিলো । অর্থ্যাৎ আমরা ৩০-৪০ বছরে যে প্রযুক্তি’র অভ্যাস সঞ্চয় করেছি, সেটা আমাদের সন্তান ২ বছর বয়সে লাভ করেছে এবং সেও বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাবে। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই প্রযুক্তি’র অভ্যাস বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে। কিন্তু ধরুন- হঠাৎ করে এক প্রজন্মে এসে মাঝখানে তার কেটে দিলাম। মানে- আমি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি সেটা আমার সন্তানকে দিলাম না, এবং তাকে জানতেও দিলাম না আমি কি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এরপর সেই প্রজন্মের সামনে নতুন করে এক হাত লম্বা সিটিসেল মোবাইল দিয়ে বলা হলো এটা নিয়ে শুরু করো। ঐ প্রজন্ম হয়ত জানবেও না তার ১০ পুরুষ পূর্বে এনড্রয়েড সেট ৪জি দিয়ে ভিডিও চ্যাট করতো, ফেসবুক, টুইটারে কত দক্ষ ছিলো। এই ঘটনাটি হলো আসল জেনারেশন গ্যাপ।

    মুসলিম সমাজে এই জেনারেশন গ্যাপ করে দেয়া হয়েছে, যেন পূর্ববর্তী মূল্যবোধগুলো মুসলমানরা লাভ করতে না পারে। ফলে মুসলমানরা নতুন করে শুরু করে একদিকে যেমন পিছিয়ে পড়েছে, অন্যদিকে সঠিক দিশা না পেয়ে দিক-বিদিক ঘুরোঘুরি করছে। মনে রাখবেন- আপনি যদি কোন জাতিকে পিছিয়ে দিতে চান, তবে শুধু দুই জেনারেশনের মাঝের সুতোটা কেটে দিন, দেখবেন ঐ জাতি সহজে দাড়াতে পারবে না, বহুদিন লাগবে দাড়াতে। এ কারণে অমুসলিম সমাজ সর্বদাই মুসলমানদের জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টি করতে চায়।

    জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টির সবচেয়ে সহজ সিস্টেম হলো ভাষা চেঞ্জ করে দেয়া। ভাষার মাধ্যমে ভাব ও মূল্যবোধ প্রবাহিত হয়। ভাষা পরিবর্তিত হলে পরবর্তী প্রজন্ম পূর্ববর্তী প্রজন্মের মূল্যবোধ গ্রহণ করতে পারে না, ফলে জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টি হয়।

    ব্রিটিশরা যখন এ অঞ্চলে এসেছে তখন এ কাজটি করেছিলো। তারা প্রথমে আরবী-ফার্সী ভাষা নিষিদ্ধ করে ইংরেজী ভাষা চালু করে দেয়। আরবী-ফার্সী ভাষা নিষিদ্ধ করায় ১১০০ বছরের সঞ্চিত মূল্যবোধ কাটা পরে। মুসলমানরা ছিলো অত্যন্ত শ্রেণীর সভ্য জাতি। শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের ধারে কাছে কেউ যেতো না। খোদ ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে ক্ষমতা পেয়ে ১০০ বছর মুসলিম প্রশাসক দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। ব্রিটিশরা ছিলো জাতিগতভাবে জলদস্যু । দেশ কিভাবে পরিচালনা করতে হয় তার বিন্দুমাত্র জ্ঞান তাদের ছিলো না। মুসলমানদের থেকে বিষয়টি শিখে নিতে তারা প্রায় ১০০ বছর ব্যয় করে। এরপর মুসলমানদের তাড়িয়ে নিজেরা প্রশাসনে বসে।

    ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ অঞ্চলের এলিট ক্লাস ছিলো মুসলমানরা। হিন্দুরা ছিলো মুসলমানদের চা-পোষা কর্মচারি। এমনকি হিন্দুরা যখন মুসলমানদের চাকুরী করতে যেতো, তখন পোষাক, বেশ-ভুষায় মুসলিম বেশ ধারণ করতো। ফারসী ভাষা শিখতো। মুসলমানদের বেশ ধারণ করতে পেরে তারা নিজ সমাজে উচু হতো। কিন্তু ব্রিটিশরা ক্ষমতায় এসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে মুসলমানদের জমি কেড়ে হিন্দু কর্মচারিদের হাতে দিয়ে দেয়, তাদের বানায় জমিদার।

    একটু চিন্তা করুণ- তখন মুসলমানরা জানতো হিন্দুরা হচ্ছে কর্মচারির জাত। কিন্তু এখন যদি কোন মুসলমানকে এ কথা বলা হয় তবে কি সে এতদূর চিন্তা করতে পারবে ?? কখনই পারবে না। কারণ জেনারেশন গ্যাপ করে মূল্যবোধ আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মুসলমানরা হয়ে পড়েছে হীনমন্য। উল্টো হিন্দু দেখলে এখন মুসলিম সমাজ হুজুর হুজুর করে তোয়াজ করে। হিন্দু বেশ ধরতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে।

    ব্রিটিশ আমলের শুরুতে জেনারেশন তার কেটে দেয়ার পর মুসলমানরা শূণ্য হয়ে যায়। এরপর ব্রিটিশদের অধিন ইংরেজী শিক্ষায় শূণ্য থেকে ফের মূল্যবোধ সঞ্চয়ের সংগ্রাম শুরু হয়। ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পর একটি জেনারেশনের মধ্যে চেতনা জাগ্রত হয় যে- “আমাদের স্বাধীন হওয়ার জন্য কিছু করা দরকার।” কিন্তু যে প্রজন্মটি জাগ্রত হয়, সেও তো সেই ইংরেজ শিক্ষায় শিক্ষিত। এজন্য মুসলমানদের পৃথক ভূমির জন্য যে শ্রেণীটি আন্দোলন করে তারা বেশ-ভূষা কিন্তু ইংরেজ বেশ-ই ছিলো, মুসলিম বেশ নয়। জিন্নাহ, সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হক সবাই ইসলামী রাষ্ট্র চাইতো, কিন্তু নিজে ধর্মে কর্মে মোটেও ধার্মীক ছিলো না। আর শিক্ষার কারণে তারাও হয়ে গেছিলো অনেকটা সেক্যুলার।

    যাই হোক, পাকিস্তান হওয়ার পর মোটামুটি মুসলমানদের মধ্যে ১০০ বছরের মূল্যবোধ জমা হলো। কিন্তু যখন বাংলাদেশ হলো তখন প্রজন্মে আবার গ্যাপ হয়ে গেলো। দেখবেন- বর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা করে তারা কিন্তু ৫২ এর উপরে উঠতে চায় না। কারণ ৫২ এর উপরে উঠলে বাংলাদেশের মানুষের মুসলিম পরিচয় বের হয়ে আসে। আর মুসলিম পরিচয় বের হলে আরো ১০০ বছরের মূল্যবোধ বের হয়, মুসলমানদের অনেক শক্তিশালী করে। কিন্তু সেটা তারা কৌশলে আটকে রাখে।

    আসলে মুসলমানদের জন্য খুব দুর্ভাগ্য। তারা বার বার জেনারেশন গ্যাপের স্বীকার হয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে ইংরেজ আমলের মূল্যবোধের সংযোগ একবার কেটে দেয়ার পর ফের বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার সময় আবার কাটা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের মুসলমানদের কোন নিজস্ব কোন চেতনা, মূল্যবোধ নেই। তারা জানে না কে তাদের পূর্বপুরুষ। অনেকে ভাবে তারা হিন্দুর থেকে এসেছে, অনেকে ভাবে হিন্দুকে তোয়াজ করাই বাঙালীয়ানা, আবার অনেকে হিন্দুয়ানী কালচার পালন করে নিজেকের ঐতিহ্যবান ভাবে। “৭১-৫২ আগে বাংলাদেশীদের মূলবোধ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না” আমার মনে হয় এই চিন্তাধারা থেকে সরে আসা উচিত। ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এরপরও মূল্যবোধের পুনঃসংযোগ করলে, জাতি কিছুটা যদি জাগ্রত হয়।


    ------------------------------------------------------------------

    --আমার ফেসবুক মূল পেইজ Noyon chatterjee 5
    (https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
    --পেইজ কোড- 249163178818686 ।

    --আমার ফেসবুক ব্যাকআপ পেইজ-  Noyon Chatterjee 6
    (https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728