আপনার সামনে কথিত সুন্দরীর শরীর মাপতে দেয়া হচ্ছে, এই সুযোগে আপনার কাধে চাপিয়ে দিচ্ছে ঋণের পাহাড়
বাংলাদেশে বারং বার ভারতীয় পারফর্মমার এনে প্রোগ্রাম করায় অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কথিত অন্তর শোবিজ বা তার কর্ণধার স্বপন চৌধুরীর। এ দ্বারা এতটুকু অনুধাবন করা যায়, ভারতের সাথে এই ব্যক্তি ও তার কোম্পানির বেশ ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান। এবার ‘মিছ বাংলাদেশ’ নামক কথিত সুন্দরী প্রতিযোগীতার আয়োজকও এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি। দেখা যাচ্ছে, শুরু থেকে বিভিন্ন নাটক-ধোকাবাজি করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে এরা।
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের মানুষ যখন ‘টাউট এভ্রিল’ নিয়ে মেতে ছিলো, তখন ভারত বাংলাদেশের সাথে অনেকটা বিনা বাধায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের একটা চূক্তি করে গেলো। স্মরণ হচ্ছে, এর আগে প্রত্যেকটা চূক্তির পূর্বেই প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক ও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘কেচো খুড়তে সাপ’র মত বিরাট গণ্ডগোল বের হয়ে আসতো। ফলশ্রুতিতে চূক্তি নিয়ে সরকারকেও বেশ বেগ পোহাতে হতো। কিন্তু এবার সেই সুয়োগই হয়নি, কারণ জনগণ মেতে ছিলো ‘এভ্রিল ফুল’ নিয়ে আর সে সুযোগে বিনা বাধায় গোল দিলো দুই রাষ্ট্রের বন্ধু সরকার।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন-
“ভাই ঋণ দিচ্ছে, এটা নিয়েও সমালোচনা। আপনি তো খুব খারাপ লোক।”
হা ভাই, আমি খারাপ লোক। তবুও আমি জানতে চাইছি, ভারত কেন এখন বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে ?
কারণ ভারতের জনগন ও মিডিয়া বলছে- ভারতের এখন কঠিন দুঃসময় !!!
আপনাদের জানা থাকার কথা,
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় ভারতের দু’বারের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিং ভারতের অর্থনীতির করুণ অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখাটির শিরোনাম ছিলো- ‘আমার এখন কথা বলা প্রয়োজন’ (আই নিড টু স্পিক আপ নাউ) (http://bit.ly/2xEJOfQ)।
আর্টিকেলটিতে যশোবন্ত সিং এর বক্তব্য-
১) ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে এক নৈরাজ্যকর অবস্থায় পড়েছে; সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো লাখ লাখ বেকার তৈরি করেছে;
২) বিগত দশকগুলোর মধ্যে ভারতে বেসরকারি বিনিয়োগ বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে; প্রবৃদ্ধিও ক্রমে নীচুমুখী;
৩) দেশের অন্তত ৪০টি বড় কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে আছে;
৪) ভারতীয় অর্থনীতির একটি কষ্টকর পতন আসন্ন।
এই যখন ভারতের করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা তখন বাংলাদেশের তাদের কথিত ঋণচূক্তির অর্থটা কি ?
এতে বাংলাদেশের বেশি স্বার্থ, নাকি ভারতের বেশি স্বার্থ ?
খবর নিয়ে কথিত চূক্তির শর্তগুলো সম্পর্কে জানলাম-
ক) নির্দ্দিষ্ট কিছু প্রজেক্টের জন্য এই কথিত ঋণ দেয়া হবে,
খ) কথিত ঋণ এর আসল ভারতীয় মালামাল বিক্রয়। মানে ঐ বিশেষপ্রজেক্টগুলো নির্মাণ করতে ভারতীয় সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
গ) যারা এর দায়িত্বে থাকবে মানে ঠিকাদাররাও ভারতীয় হতে হবে।
ঘ) টাকা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশের ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড়, আর টাকা আনা হয় পাশ্বর্বতী দেশের ব্যাংক থেকে !)
(http://bit.ly/2wAfQXi)
তারমানে, এই চূক্তির নাম আসলে ঋণচূক্তি না দিয়ে পণ্যবিক্রয় চূক্তি হওয়া উচিত। তফাৎ শুধু সুদে আসলে ২০ বছরে ফেরত দিতে হবে। মানে এখানেও ভারতের লাভ। পাশাপাশি ঠিকাদার ভারতের হওয়ায় ২টি সুবিধা হবে-
প্রথমত, এই সব ভারতীয় ঠিকাদারদের অতি উচ্চ বেতন দিয়ে রাখতে হবে। (দেখা যাবে ভারতে সে বেতন পায় ১৫ হাজার, বাংলাদেশে দিতে হবে ৩ লক্ষ)
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় ঠিকাদারের আন্ডারে কাজ হওয়ায় ভারত ১ নম্বর মাল দিলো নাকি ৫ নম্বর মাল দিলো সেটা দেখার সুযোগ পাবে না বাংলাদেশ।
আরো আলোচনার বিষয় হচ্ছে, ভারতের থেকে কথিত ঋণ নিয়ে যে প্রজেক্টগুলো করা হচ্ছে, তার বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?? কারণ বর্তমানে এমন সব প্রজেক্ট আওয়ামী সরকার হাতে নিচ্ছে, যেগুলোর বাস্তবে কোন প্রয়োজনীয়তা নাই, শুধুমাত্র সরকার শীর্ষদের কমিশন খাওয়ার লোভে এবং ভারতীয় দুই নম্বর মাল বিক্রির উদ্দেশ্যে এইসব ভুইফোড় প্রজেক্ট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
অনেকে হয়ত, বলতে পারেন
“হইলে হইছে, তাতে আমার কি? ক্ষতি হইলে সরকারের হইছে, দেশের রিজার্ভের হইছে, তাতে আমার কি? আমারে আমার কাজে থাকতে দেন।”
এ ধরনের বেখেয়াল মানুষদের জন্য বলছি-
এ বছর বাজেট হয়েছে ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকার।
এর মধ্যে শুধু ঋণের সুদ (আসল নয়) দিতে হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা
এবং আসলসহ এর পরিমাণ দাড়ায় ৪-৫ গুন।
অর্থাৎ সরকার যে সব ঋণ দিচ্ছে, তা কিন্তু সুদে-আসলে আপনাকেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ছে, ডালের দাম বাড়ছে, ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ছে, ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ছে, তেলের দাম বাড়ছে, বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে, গ্যাসের মূল্য বাড়ছে তার পেছনে রয়েছে ঐ সুদ-আসল পরিশোধ।
সোজাভাষায়, আপনার সামনে সাজিয়ে গুজিয়ে কথিত সুন্দরীর বুক-কোমড় আর নিতম্ব মাপতে দেয়া হচ্ছে, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দিয়ে রান-উইকেটের হিসেব রাখতে বলা হচ্ছে, আর সেই সুযোগে এসব কথিত চুক্তির নামে আপনার কাধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বিশাল ঋণের পাহাড়। যার বোঝা আপনাকে টানতে হচ্ছে প্রতিদিন, টানতে হচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
------------------------------------------------------------------
--আমার ফেসবুক মূল পেইজ Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
No comments