হিংসার চর্চা, সরকার, প্রশাসনের দুর্নীতি আর মিডিয়ার অপসাংবাদিকতার বলি গরীব রিকশাচালক
গতকাল দৈনিক প্রথম আলো খবর করেছে, বগুড়ায় ব্যাটারি চালিত রিকশা গুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ (http://bit.ly/2fUfxTW)। এটা নিয়ে অনেকেই আলোচনা-সমালোচনা করছে। কিন্তু মূল বিষয়টি কি এবং তার সমাধান কি তা নিয়ে আলোচনা নেই।
ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটো মূলত দুইটি কারণে নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার-
১) সরকারের দাবি- এর কারণে বিদ্যুৎ অপচয় হয়। প্রতি রিকশায় দৈনিক খরচ হয় ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ। বাণিজ্যিক হিসেবে এর মূল্য প্রায় ৩০ টাকা।
২) ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটো কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
তবে এই দুই কারণের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে-
ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটোর নিষিদ্ধ চায় সিএনজি মালিক সমিতি (http://bit.ly/2hRYjHF, http://bit.ly/2hRCxDN)। কারণ এই ব্যাটারি চালিত যানের কারণে তাদের ইনকাম কমে যাচ্ছে। দেখা যায়- ভিভিআইপি সিএনজি চালকরা সুযোগ বুঝে ১ কিলো যাইতে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চেয়ে বসতো। কিন্তু ব্যাটারি চালিত যান থাকলে তাদের সেই সুযোগটা থাকে না। যতদিন ঢাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা ছিলো ততদিন সিএনজি চালকরা মিটারে চলতে বাধ্য ছিলো। তারা পাবলিকের গলা কাটতে পারছিলো না। এ কারণে তারা সরকার, প্রশাসন ও মিডিয়াতে প্রচুর ইনভেস্ট করে। এবং নিজেরাও মাঠে নেমে আন্দোলন করে। এ কারণেই ব্যাটারি চালিত রিকশা বাতিল করতে উদ্যোগী হয় সরকার-প্রশাসন। যে প্রথম আলো আজকে ব্যাটারি চালিত গাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার কারণে কান্নাকাটি করছে, সেই প্রথম আলোই কিন্তু বহুবার ব্যাটারি চালিত রিকশার কারণে বিদ্যুৎ অপচয় হয়, এটা নিয়ে রিপোর্ট করেছে। (http://bit.ly/2xkEHmh, http://bit.ly/2fWehju)
পুরো ঘটনা অবজারভেশনে আমার মতামত হলো-
ক) ব্যাটারিচালিত রিকশায় যদি বিদ্যুৎ অপচয় হয়, তবে টিভি, এসি, ফ্লাডলাইট, সংসদ ভবন (এক সংসদ ভবনের বিদ্যুৎ দিয়ে ৮-১০ লক্ষ লোকের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব-http://bit.ly/2fPfmWu) এসব দিয়েও বিদ্যুৎ অপচয় হয়। তাহলে শুধু গরীব রিকশা চালকের উপর খড়গ নামবে কেন, সবার উপরই নামুক।
খ) ব্যাটারি চালিত রিকশা মানুষের জীবনকে গতিশীল করে। সিএনজি ড্রাইভারদের গলাগাটা হ্রাস করে। মানুষকে কম ভাড়ায় দ্রুত নিয়ে যায়। এগুলো তার উপকারিতা। এটা ঠিক, তার মধ্যে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার কিছু সম্ভবনা থাকে। মাথা ব্যাথ্যা হলে ম্যাথা কেটে ফেলা কোন সমাধান নয়। কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে, যেমন-রিকশার চাকা মোটা করা, সামনে হাতল বা বক্স করে দেয়া (যেন ছিটকে না পড়তে পারে), ব্রেক সিস্টেম উন্নত করা, ব্যাটারি চালিত রিকশাচালকদের ট্রেনিং দেয়া ও লাইলেন্স দেয়ার মাধ্যমে দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
গ) পায়ে চালিত রিকশা আমার কাছে খুবই অমানবিক বলে মনে হয়। দুইজন-তিনজন মানুষকে একজন মানুষ পা দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে এটা সত্যিই কষ্টদায়ক। আমি অনেক রিকশাচালকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, পায়ে চালিত রিকশার কারণে নাকি তাদের পুরুষত্ব হ্রাস পায়। অধিকাংশ রিকশা চালক প্রতিদিন রিকশা চালাতে পারে না। ১ দিন চালায়, আর একদিন অসুস্থতার কারণে বিশ্রামে থাকে।
ঘ) ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের দাবিদারদের একটা যুক্তি হচ্ছে, এর মাধ্যমে নাকি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়। কিন্তু এটা তো রিকশা চালকদের দোষ না। এটা তো বিুদ্যৎবিভাগের দোষ। সরকার বৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিক, ট্রাফিক চেক করার সময় দুটো জিনিস চেক করুক- চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বৈধ স্থান হতে চার্জ দেয়ার কার্ড। তাহলেই তো হয়।
আমার মনে হয়, ব্যাটারি চালিত রিকশা বা অটো যাতায়তের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিলো। সমস্যা কিছু ছিলো, কিন্তু সেটা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করলে তা দূর করা যেতো। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে- সেটা হলো হিংসার চর্চা, সরকার, প্রশাসনের দুর্নীতি আর মিডিয়ার অপসাংবাদিকতা। যার প্রথম ভূক্তভোগী হচ্ছে, গরীব রিকশাচালক এবং আলটিমেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মধ্যবিত্ত জনগন। বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের আমরা দায়িত্বশীল (প্রশাসন-মিডিয়া) মনে করছি, তারা দেশের খুব কমই ভালো চায়।
------------------------------------------------------------------
--আমার ফেসবুক মূল পেইজ Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5),
--পেইজ কোড- 249163178818686 ।
No comments